মার্কিনিদের দখল মুক্ত স্বাধীন আফগানিস্থান: স্বাগতম

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » মার্কিনিদের দখল মুক্ত স্বাধীন আফগানিস্থান: স্বাগতম
বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট ২০২১



২০ বছরের মার্কিন গোলামী থেকে মুক্ত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম আফগানিস্থান। ৩ লক্ষাধিক সুশিক্ষিত আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনী ও শক্তিশালী বিমান বাহিনীর সামরিক প্রস্তুতি সত্বেও মার্কিন সরকারের আজ্ঞাবহ আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি মাত্র ৬০/৭০ হাজার তালেবান মুজাহিদের রাজধানী অপরাধের কথা শুনে প্রচুর পরিমাণ অর্থ স¤পদসহ হেলিকপ্টার যোগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তালেবান মুজাহিদ দলের নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদাররের নেতৃত্বে আফগানিস্তান এখন স্বাধীন সার্বভৌম দখলদারমুক্ত “ইসলামী আমিরাতে আফগানিস্তান” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
ইতিমধ্যেই তালেবান মুজাহিদরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কে সহ যারা গত ২০ বছর যাবৎ দখলদারদের হয়ে কাজ করেছেন তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। অতীতের সমালোচনা থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে তারা ইতিমধ্যেই নারী শিক্ষা এবং সরকার ও প্রশাসনিক কাজে নারীদের অংশগ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। তারা উদারনৈতিক ভাবে ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
আফগানিস্থানে রক্তপাতহীন ইসলামী গণঅভ্যুত্থান ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা মূলত বিশ্ব মুসলিমের ইতিহাসে আরেকটি অবিস্মরণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিশ বছর আগে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের হোতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী পাঠিয়ে তৎকালীন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে উৎখাত করে  নিজেরা পাহারা দিয়ে মার্কিন তল্পিবাহক আফগান সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত ২০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান দখল রাখার জন্য কয়েক লক্ষ কোটি বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। মার্কিন বাজেটের একটা বিরাট অংশ আফগানিস্তানের  পেছনে ব্যয় হতো । তাছাড়া তাদের হাজার
হাজার সৈন্য আত্মহত্যা করে অথবা তালেবান মুজাহিদ দের হাতে নিহত হয়েছে। দখলদারিত্ব বজায় রাখা সম্ভব না বিধায় ট্রা¤প সরকার আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গুটানোর ঘোষণা দেয়। বাইডেন সরকার এসে তা বাস্তবায়ন করে। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে মাত্র এক সপ্তাহের অভিযানে আফগান মুজাহিদরা সারা দেশ নিজেদের দখলে নিয়ে অবশেষে গত ১৫ আগস্ট আশরাফ গনি পালিয়ে গেলে বিনা রক্তপাতে রাজধানীর কাবুল দখল করেছে।
আফগানিস্তানের স্বাধীনতার রয়েছে বিশ্ব ইতিহাসে এক ঐতিহ্য গত অবস্থান। হাজার হাজার বছর আগে মহাবীর আলেকজান্ডার আফগানিস্থান জয় করে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন যে তিনি বলতে বাধ্য হয়েছিলেন “আফগানিস্তানের ঢোকা সহজ, কিন্তু বের হওয়া সহজ নয়”। পরবর্তীতে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এমনকি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ১৮৩৯ সালে আফগানিস্থান দখলে আনার জন্য চেষ্টা করেছিল। তাদের সেনাবাহিনী সহ মোট ১৬ হাজার নাগরিকের মধ্যে শুধু একজন প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিল। বিগত শতাব্দীতে ১৯৭৯ সালে রাশিয়া আফগানিস্তান দখল করে বারবাক কারমাল নামে একজনকে ক্ষমতায় বসিয়েছে ছিল। পরে তাকে সরিয়ে নূর মোহাম্মদ তারাকি, হাফিজুল্লাহ আমিনসহ অনেককে দিয়েই আফগানিস্তানকে দখলে রাখার চেষ্টা করেও একদশকের মাথায় পরাজয়ের কলঙ্ক আর বিশাল লোকসান নিয়ে ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ২০০১ সালে আমেরিকা সৈন্য পাঠিয়ে আল-কায়েদা দমনের নামে তালেবান সরকারকে উৎখাত করে দেশটির ক্ষমতা দখল করেছিল। ২০ বছর সর্বশক্তি দিয়ে দেশটি দখলে রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত বিশাল ক্ষয়ক্ষতি ,অর্থদ-, প্রাণহানি ও একরাশ পরাজয়ের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
তালেবান মুজাহিদের নাম শুনলে একশ্রেণীর মানুষের গাত্রদাহ শুরু হয়। এটা খুবই দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। ইসলাম ও মানবতার শত্রু ইজরাইল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া গুলো মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। যারা ২০ বছরে মার্কিন দখলের বিরুদ্ধে একটি কথা উচ্চারণ করেনি ,তারাই মুক্তিযোদ্ধা আফগান মুজাহিদদেরকে কলঙ্কিত করার জন্য নানাভাবে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
তালেবান আর আল-কায়েদা এক জিনিস নয়। তালেবানের উৎপত্তি হয়েছিল রাশিয়া আফগানিস্থান দখল করার পরে। সে সময় পাকিস্তানে ৩০ লক্ষ আফগান শরণার্থী এবং ইরানের ১৫ লক্ষ আফগান শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। যারা ঐ সব দেশে দীর্ঘ ১০ বছর কাটিয়ে অর্ধেক পরিমাণ নিজ দেশে ফিরে এসেছে বাকীরা ঐ সব দেশেই থেকে গিয়েছে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ কর্তৃক পরিচালিত শরণার্থীদের মাদ্রাসাসমূহের ছাত্রদের দ্বারা তালেবানের সৃষ্টি হয়েছিল।
১৯৮৯ সালে রাশিয়া চলে গেলে সেখানকার বিভিন্ন ইসলামী দল ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। হেজবে ইসলামীর টি গ্রুপ, জমিয়তে ইসলামি সহ বিভিন্ন দলের মধ্যকার বিরোধ চরম আকার ধারণ করলে ১৯৯৬ সালে তালেবানরা আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন হয়। কিন্তু ৫ বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সহযোগিতায় সৈন্য পাঠিয়ে আক্রমণ করে আফগানিস্তানকে দখল করে নিয়েছিল। আজ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে আফগানিস্তান পুনরায় স্বাধীন হলো। শতকরা ৯৯ জন মুসলিম অধ্যুষিত ইসলামী আদর্শের পাবন্দি আফগান জনগণ তালেবান মুজাহিদদের মধ্যে তাদের তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। ইতিমধ্যেই তালেবানরা মহানবী স: এর মক্কা বিজয়ের আদর্শের অনুরূপ সকল ভিন্নমতাবলম্বীদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়ে সকলের সাথে সমন্বিতভাবে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র পাকিস্তান, চীন, ইরান ছাড়াও রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব সহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রসমূহ তালেবানদের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছে। আমরা আফগানিস্তানের দখলদারিত্ব মুক্তিকে স্বাগত জানাই। আশা করব তালেবান-সরকার জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি দৃষ্টি রেখে ইসলামী আদর্শের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আফগানিস্তানের শান্তি, উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ সফলতা নিশ্চিত করতে সফল হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১:৩৭:২০   ৫২৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ