বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

চরফ্যাসনে প্রতিবন্ধী গৃহবধূর যৌন নিপীড়নের মামলা নিতে অস্বীকার করলেন ওসি

প্রচ্ছদ » অপরাধ » চরফ্যাসনে প্রতিবন্ধী গৃহবধূর যৌন নিপীড়নের মামলা নিতে অস্বীকার করলেন ওসি
সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১



চরফ্যাসন প্রতিনিধি ॥
চরফ্যাসনে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে যৌন নিপীড়নের মামলা না নিয়ে সমঝোতা করতে ভিক্টিম পরিবারকে চাপ দিচ্ছেন দক্ষিণ আইচা থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) হারুন অর রশিদ। ডিআইজি পদমর্যাদার সমকক্ষ পদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশ থাকায় তিনি (ওসি) মামলাটি নিতে পারবেন না বলে ভিক্টিম পরিবারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এবং দাখিলকৃত এজাহারটি ফেরৎ দিয়েছেন। পুলিশের এমন বক্তব্য শুনার পাশাপাশি আসামী পক্ষের হুমকী ধামকীতে ভিক্টিম পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
ভিক্টিমের বাবা সোমবার অভিযোগ করেছেন। চরফ্যাসনের দক্ষিণ আইচা থানার নজরুলনগর ইউনিয়নের চর আর কলমী গ্রামের বজলুবাজার এলাকার শারিরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে দুলাল হোসেন নামের এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। গত ২ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে অভিযুক্ত দুলালের বাড়িপাশের খালপাড়ের রাস্তা দিয়ে নিজবাড়ি ফেরার পথে প্রতিবেশী শামসুদ্দিনের ছেলে অভিযুক্ত দুলাল প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে যৌননিপীড়ন করেন। গৃহবধূ বাধা দিলে দুলাল তাকে মারধর করেন। মারধরে আহত প্রতিবন্ধী গৃহবধূ দুলালের বাড়ি গিয়ে ঘটনাটি জানালে দুলালের বাবা শামসুদ্দিন, ভাই ইমন ও মা নাজমা মিলে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে বাড়ির উঠানে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন। মারধরে আহত প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে স্বজরা উদ্ধার করে শুক্রবার রাতে চরফ্যাসন হাসপাতাালে ভর্তি করেন।
ভিক্টিম গৃহবধুর বাবা জানান, দুই দফার মারধরে গুরুতর আহত মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চরফ্যাসন হাসপাতালে আনার পর দুলাল হোসেন দলবল নিয়ে হাসপাতাল চত্তরে তাকেও (ভিক্টিামের বাবা) মারধর করেন। এই ঘটনায় শুক্রবার রাতেই ভিক্টিম বাদি হয়ে দুলাল হোসেন, তার বাবা শামসুদ্দিন, মা নাজমা ও ভাই ইমনকে আসামী করে দক্ষিণ আইচা থানায় এজাহার দাখিল করেন। ঘটনার দু’দিন পর রোববার দুপুরে অফিসার ইন চার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ ও ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে ভিক্টিম পরিবারকে বিকেলে থানায় যাওয়ার নির্দেশ দেন ওসি। রাতে (রোববার) ভিক্টিমের বাবাসহ স্বজনরা থানায় গেলে পুলিশ গভীর রাত পর্যন্ত তাদের থানায় বসিয়ে রাখেন। গভীর রাতে ওসি হারুন অর রশিদ ভিক্টিমের বাবাকে মামলা না করে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় নি¤পত্তির প্রস্তাব দেন।
ভিক্টিম পরিবার এই প্রস্তাবে রাজি না হলে ওসি জানান, মামলা না নেয়ার জন্য ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তার নির্দেশ আছে। এই নির্দেশ উপেক্ষা করে আমি (ওসি) মামলা নিতে পারছিনা। অভিযুক্ত দুলাল যৌননিপীড়ন করেন এবং গ্রামে সালিশ বিচারের মাধ্যমে সেই অভিযোগ নি¤পত্তি করা হয়েছিল বলে স্থানীয় জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত দুলাল হোসেন জানান, যৌন নিপীড়নের বিষয়টি সঠিক নয়। তারা (ভিক্টিম পরিবার) আমার পরিবার ও আমাকে হয়রানীর করার জন্য অহেতুক অভিযোগ তুলেছে। উল্টো আমার পরিবারের লোকজনকে মারধর করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে কর্মরত দুলাল হোসেন সম্প্রতি ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন। ছুটিতে বাড়িতে এসেই সে বিজিবিতে কর্মরত থাকার প্রভাব খাটিয়ে এমন অনেক অপকর্মের শামিল হয়েছেন।
ভিক্টিম পরিবারের অভিযোগ দায়েরের পর দক্ষিণ আইচা থানার ওসি হারুন অর রশিদকে একাধিকবার অফিসিয়াল নম্বরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনি। ওসি হারুন অর রশিদ ফোন রিসিভ না করায় সহকরী পুলিশ সুপার (চরফ্যাসন-সার্কেল) শেখ সাব্বির হোসেন সাথে মুঠো ফোনে অভিযোগ প্রসংঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ না করে বার বার কেটে দিয়েছেন। তার অফিসে গিয়ে ও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৬:৫২   ৪০৬ বার পঠিত