গুঁড়া দুধে অতিমাত্রায় সিসা

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » গুঁড়া দুধে অতিমাত্রায় সিসা
শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৮



দুধের প্রতি মানুষের রয়েছে স্বাভাবিক আকর্ষণ। আর ফ্যাশন হোক বা অন্য কিছুই হোক, এখনো ছোট শিশুদের প্রধান খাদ্যই হচ্ছে দুধ। কিন্তু ঢাকায় বা বড় শহরগুলোতে গাভির তাজা দুধ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে গুঁড়া দুধের টিন বা প্যাকেট কিনতে হয়। কিন্তু সেই দুধ কতটা নিরাপদ? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কিছু নমুনা পরীক্ষায় আমদানি করা গুঁড়া দুধে পাওয়া গেছে অত্যন্ত ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা বা ভারী ধাতু। গুঁড়া দুধে সিসার সহনীয় মাত্রা হচ্ছে প্রতি কেজিতে ০.০২ মিলিগ্রাম। অথচ পরীক্ষায় পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার ৫০ থেকে ২০০ গুণ বেশি পরিমাণে সিসা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মাত্রায় সিসা শরীরে গেলে কিডনি, লিভার বিকল হওয়াসহ দীর্ঘমেয়াদি অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আমদানি করা দুধের শতভাগ চালানে সিসা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাজারে এর কী প্রভাব পড়বে এবং তা কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, সে বিষয়ও একই সঙ্গে ভাবতে হবে।
দেশে আমদানি করা গুঁড়া দুধ আসে মূলত সমুদ্রবন্দর দিয়ে। এ ছাড়া স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর দিয়েও কিছু পরিমাণে গুঁড়া দুধ আসে। জানা যায়, কোনো বন্দরেই সিসা পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আমদানি করা দুধের নমুনা পাঠাতে হবে ঢাকার তিনটি পরীক্ষাগারে। সংশ্লিষ্ট বন্দরে পরীক্ষার ফল যেতে লেগে যাবে ২০ দিনের মতো। তত দিন সেই চালানের গুঁড়া দুধ বাজারজাত করা যাবে না। গুঁড়া দুধে সিসা অতিমাত্রায় থাকলে তা ধ্বংস করা হবে বা সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এতে বাজারে নিঃসন্দেহে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হবে। সুযোগসন্ধানী বিক্রেতারা স্টকে থাকা গুঁড়া দুধের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেবে। ভোক্তাদের মধ্যেও হাহাকার সৃষ্টি হবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে কিভাবে? আবার যেসব গুঁড়া দুধ বাজারে চলে এসেছে, ধরে নেওয়া যায় সেগুলোতেও অত্যন্ত ক্ষতিকর মাত্রায় সিসা রয়েছে। সেগুলো কি বিক্রি হতেই থাকবে? এ বিষয়ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে দুধের উৎপাদন বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এমনকি, দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করাও সম্ভব। কিন্তু তেমন জোরালো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। তাই এই পথে তাৎক্ষণিক এ সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
বন্দরগুলোতে দ্রুততম সময়ে সিসা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে পরীক্ষার জন্য কোনো চালান দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে না থাকে। আমদানিকারকদের উচিত, তাঁরা যাদের কাছ থেকে গুঁড়া দুধ আনেন, তাদের কাছ থেকে সিসার উপস্থিতি জেনে বা তাদের এসংক্রান্ত সনদ নিয়ে গুঁড়া দুধ আমদানি করা। কিন্তু কোনোভাবেই অতিমাত্রায় সিসাযুক্ত গুঁড়া দুধ বাজারে বিক্রি করতে দেওয়া উচিত নয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৬:০৪   ৮৩১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ