বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিডির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

প্রচ্ছদ » অপরাধ » ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিডির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২



বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আতাউর হরমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই অধিদপ্তরের অনিয়ম,দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য এখন প্রকাশ্যে অপেন সিন্ডিকেটে পরিনত হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের বিদ্যুৎ খাত। তার দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্যের ফলে লোপাট হচ্ছে সরকারি অর্থ। যথাযথ নজরদারি না থাকায় কাজের গুণগতমান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

---

ওই দপ্তরের একাধিক ঠিকাদারদের অভিযোগে জানা গেছে, উপ-পরিচালক আতাউর হরমান এই খানে জয়েনিং করার পর থেকে ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার পর বিলের চেক আটকে ঘুষ আদায় করা, প্রাপ্ত কাজের অনুকূলে ও বিলের ফাইল আটকে ঘুষ আদায়সহ জামানতের চেক প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ঠিকাদাররা।
উপ-পরিচালকের এই ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনা ঠিকাদার মহলে ওপেন সিকরেট হলেও  চলমান কাজের জটিলতার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না অনেক ঠিকাদাররা।
একাধিক ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, গত বছর ও চলতি বছরে কাজের অর্থ পরিশোধের জন্য নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে চেক গ্রহণ করবে। অথচ এই সুযোগে উপ পরিচালক আতাউর হরমানের ঠিকাদারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। যে ঠিকাদার তাকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে সক্ষম হয় তাকে চাহিদামতো বিল পরিশোধ করেছেন তিনি।
এছাড়াও বিল পরিশোধের সময় বিশেষ জামানতের অজুহাত দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন উপ পরিচালক। কোনো ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে কাজের নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ১৩ লাখ টাকার কাজ শেষ করে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বসেন উপ পরিচালক। তিনি অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে তার ফাইল নিয়ে প্রায় দুই মাস তালবাহানা করেন। পরে তার চাহিদা মতো পুরো টাকা দিলে তৎক্ষণাৎ তার চেক প্রস্তুত করে দেন।
ওই দপ্তরের আরেক জন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জুন ফাইনালে কাজের অনুকূলে প্রায় তিন লক্ষ টাকার একটা কাজ করেন তিনি। এতে ধরা অনুযায়ী সঠিক ভাবে মালামাল চাপলাই দিতে গিয়ে তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। আয়কর ও ভ্যাট বাদ দিয়ে তিনি ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭০৫ টাকার চেক আনতে গেলে ডিডি লোকসানের কথা জেনেও তার কাছে সরাসরি তিন পারসেন্ট কমিশন দবি করে বসেন। তিনি তাকে প্রথমে কিছু টাকা কম দিতে চাইলে সেই (উপ-পরিচালক) বিভিন্ন অজুহাত ও তালবাহানা করে তাকে পুনরায় ১ মাস পরে চেক নিতে তার দপ্তরে আসতে বলেন। পরে তার দাবি কৃত পারসেন্ট পুরো টাকা দিয়ে দিলে তৎক্ষণাৎ তার বিলের চেক প্রস্তুত করে দিয়ে দেন।
আরে ঠিকাদার বলেন, আমি ১৫ লক্ষ টাকার কাজ করে চেক আনতে গিয়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা কমিশন দিতে হয়েছে। এমনকি জামানতের চেক আনতে গিয়েও তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
পরে তাকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে জামানতের চেক আনতে হয়েছে। উপ পরিচালক আতাউর রহমানের দাবিকৃত কমিশন না দিলে তিনি কাজের বিল বছরের পর বছর আটকে রাখেন। এই নিয়ে কোন ঠিকাদার প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে অসুভ আচারণসহ তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেন আতাউর রহমান। তার এই কমিশন বাণিজ্যর কারণে অনেক ঠিকাদাররা এই দপ্তরের নতুন কাজের শিডিউল কিনতে অনিহা প্রকাশ করছেন।
ঠিকাদাররা আরো অভিযোগ করেন, উপ পরিচালক তিনি প্রতি মাসে গড়ে ৫ থেকে ৭ দিন অফিস করেন। আর অধিকাংশ সময় ফ্যামিলির সাথে ঢাকাতে থাকার কারণ তার চাহিদা মতো কমিশন দিয়েও মাসের পর মাস বিলের চেক এর জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়।
এই সকল অভিযোগের ব্যাপারে উপ-পরিচালক আতাউর হরমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে  মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন এবং পরবর্তীতে আর ফোন রিসিভ করেনি।
এদিকে উপ পরিচালক আতাউর রহমানের এই সকল অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করে  ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছেন সচেতন মহল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৪:০৮   ৩৮৮ বার পঠিত