বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

এই মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ॥ আমরা গভীরভাবে শোকাহত

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » এই মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ॥ আমরা গভীরভাবে শোকাহত
শুক্রবার, ৫ আগস্ট ২০২২



---

গত ৩১ জুলাই দ্বীপজেলা ভোলার ইতিহাসে যে অপ্রত্যাশিত অস্বাভাবিক শোকাবহ ঘটনা ঘটে গেল তা কারোরই কাম্য ছিল না। যে ঘটনায় দুটি তরতাজা যুবকের প্রাণ হারিয়ে গেল। উভয়ের সন্তানরা এতিম হল, স্ত্রীরা বিধবা হল, মা-বাবা সন্তানহারা হল। ভোলাবাসী দলমত নির্বিশেষে বেদনায় হতবাক হয়েছে। ছাত্রদল সভাপতি সদা হাস্যময় সকলের প্রিয় নূরে আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিমের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে এবং প্রকাশিত ভিডিওসমূহ পর্যালোচনা করলে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় বিএনপি তার অঙ্গ সংগঠন সমূহ সহ কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের জন্য মিছিলের সূচনা করেছিল। যেই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র অত্যন্ত দায়িত্বশীল প্রবীণ রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর। ওই সময় পুরো এলাকাটি পুলিশের ঘিরে রেখেছিল। মিছিল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু হয়। ভিডিও সমূহে স্পষ্ট দেখা যায় গোলাম নবী আলমগীর এবং কেন্দ্রীয় নেতা মোশারফ হোসেন সহ প্রবীণ নেতৃবৃন্দকে অন্যান্যরা কিভাবে মিছিল থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। লাঠিচার্জের ফলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং লাঠিপেটায় আহত ও বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল মারতে থাকে। এ পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ওগুলি ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।
মারাত্মকভাবে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম হাসপাতালে নেয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করে। মাথায় অনেকগুলো বুলেট বিদ্ধ ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলমক প্রথমে বরিশাল পরে ঢাকায় নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিন দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সেও ইন্তেকাল করে। এ ধরনের একটি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনায় ভোলার প্রতিটি মানুষ ব্যথাহত শোকাহত বাকরুদ্ধ। ৯৬ সালের নির্বাচনের পূর্বে মিছিলে আক্রমণ গুলির মাধ্যমে একজন বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছিল।
৯৬, ২০০১, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত মারামারি হতাহতের অনেক ঘটনা ঘটেছে সন্দেহ নেই। তাতেও ভোলা শহর অনেকটা নিরাপদ ছিল। এখানে উভয় রাজনৈতিক দল পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ভদ্রতা সৌজন্যতা প্রদর্শন করেই যার যার কর্মসূচি পালন করেছে।
ভোলা শহরের আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ যতই থাক না কেন ব্যক্তিগত সৌজন্যতা ও ভদ্রতা দীর্ঘকাল যাবত বিরাজমান আছে। সেদিনের ঘটনা দুটি দলের রাজনৈতিক সংঘাত নয়। তাহলে এমন কি প্রয়োজন দেখা দিল যে গণতান্ত্রিক অধিকারে মিছিল করতে এসে মানুষকে প্রাণ হারাতে হবে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করলে তাতে সমস্যাটা কি ছিল? মিছিল যদি বন্ধ করতে হতো বিএনপি নেতা আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর সাহেবকে বললে সে অবশ্যই মিছিল বন্ধ করতেন। সেক্ষেত্রে এই অপ্রত্যাশিত হত্যাকান্ড কেন সংঘটিত হলো? ভোলার দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের কাছে এই একটি প্রশ্ন? জনগণ শান্তিতে থাকতে চায়। ভোলায় দীর্ঘকাল যাবত একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে। সেটাকে কেন অশান্ত করা হলো। এর মূল কারণ কি? এর পেছনে কারা রয়েছে? তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। দুটি রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্ব সংঘাতে মানুষ আহত হয় কেউ কেউ নিহত হয় এখানে তো সে ধরনের কোন পরিস্থিতি ছিল না। তাহলে কেন রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে এসে মানুষকে প্রাণ দিতে হবে সেটাই সবার প্রশ্ন।
এই ঘটনায় ভোলার পুলিশ বিভাগের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ভোলার পুলিশ সুপার মহোদয় ইতিমধ্যেই অনেক ভালো কাজ করে আমাদের অনেকের প্রিয়ভাজন হয়েছেন, জনপ্রিয়তা ও অর্জন করেছেন। কিন্তু পুলিশ বিভাগের প্রধান হিসেবে  এই ঘটনায় দায় ও দায়িত্ব তিনিও অস্বীকার করতে পারবেন না। পুলিশ বিভাগের উচিত মাঠ পর্যায়ে যারা ছিল তাদের গুলি করার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল কিনা সেটা খতিয়ে দেখা এবং শুরু থেকে যা হয়েছে তার সঠিক পর্যালোচনা করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করে জনগণের ক্ষোভ এবং প্রশ্নের অবসান ঘটান। দুটি তাজা প্রাণ কেন বিসর্জন হল তার কারণ বের করা। এ ব্যাপারে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
আমরা যারা রাজনীতি করি না তারা চাই দেশটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হোক। যারা রাজনীতি করে যে দলেরই হোক তারা আমাদের বন্ধু আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রিয় মানুষ। তাদের কেউ যদি সে বিএনপি’র হোক আওয়ামী লীগের হোক অন্যায় ভাবে নির্যাতনের শিকার হয় কিংবা কাউকে যদি হত্যা করা হয় সেটা আমাদের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
আমরা জানি যে দুজন মূল্যবান মানুষ চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে তাদেরকে আমরা আর কখনো ফিরে পাবো না। তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালবাসা এবং দোয়া। তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা এবং শুভেচ্ছা। পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করছি এই দুইজনকে যেন তিনি জান্নাতবাসি করেন। মানুষ যদি এই হত্যাকা-ের বিচার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেন অতীতের অনেকের মত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৪:৩৯   ৭৩৪ বার পঠিত