বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি ॥
ভোলার বোরহানউদ্দিনে তেঁতুলিয়া নদীর তীব্র ভাঙনে মূল বেড়িবাঁধ ভেঙে রিং বেড়িবাঁধেরও প্রায় ৫০০ ফুট ভেঙে গেছে ও ৬-৭ টি স্থান ধসে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের বসতিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় এলাকাবাসী বাঁধ সংস্কারসহ দ্রুত ব্লক বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, এক সময় মূল বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার হওয়া সড়ক ও জনপথ নির্মিত প্রায় দেড় কিলোমিটার পাকা সড়ক কাম বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়ার প্রায় আড়াই বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্মিত রিং বেড়িবাঁধটি কুতুবা ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ড এলাকা দিয়ে ৫০০ ফুটের বেশী এরাকা নিয়ে নদীগর্ভে চলে গেছে। ওই এলাকার সাবেক মেম্বার মাকসুদুর রহমানের মাছের ঘেরের পাড় না থাকলে পানি পূর্ণিমার জোয়ে ইতিমধ্যেই লোকালয়ে ঢুকে যেত। মাছের ঘেরের পাড় ধসে এখন সামান্যই অবশিষ্ট আছে। এছাড়া রিং বেড়িবাঁধের গঙ্গাপুর এলাকার ৬-৭ টি স্থানে ধসে গেছে। ফলে অতি জোয়ার বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে লোকালয়ে অনায়াসে পানি ঢুকে পড়বে।
কুতুবা ইউনিয়নের তিন নাম্বার ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান, মিরাজ হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, ওবায়দুল হক বলেন, দ্রুত ব্লক বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা না নিলে আমরা ভিটেমাটি হারাব। একই ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের মাওলানা নেছারউদ্দিন, হাফেজ জাফর শরীফ, আশরাফ ফারুক জানান, নদীর ¯্রােত রিং বেড়িবাঁধ ভেঙে ফেলেছে। আমরা অসহায়ের মতো ভাঙন দেখছি আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। দুই নাম্বার ওয়ার্ডে অবস্থিত ৭৬ বছর বয়সি ছোটমানিকা ফাজিল মাদ্রাসা।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সাইফুল্যাহ জানান, মাদ্রাসায় ৬৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী। নদী থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুট। অবিলম্বে ব্লক বাঁধ নির্মাণ না করলে মাদ্রাসা নদীগর্ভে চলে যাবে। এলাকার শিক্ষার্থীরা গভীর সংকটে পড়বে।
কুতুবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ জানান, গত দুই বছরে এক ও দুই নাম্বার ওয়ার্ডের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ব্লক বাঁধ নির্মাণ না করলে এ সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। নদীসংলগ্ন গঙ্গাপুর ও কুতুবা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দৌলতখান উপজেলা দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৪ নাম্বার ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেবল হক ব্যাপারী, ইব্রাহিম মেম্বার, মনির হোসেন, রুহুল আমিন, আ. গনি জানান, ধসে যাওয়া বাঁধ থেকে তাদের ঘরবাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ গজ। গত ২ বছর আগেও তা আধা কিলোমিটার দূরে ছিল। এখনো ব্লক বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে তাদের ভিটামাটি হারাতে হবে।
গঙ্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রিয়াজ জানান, গত দুই বছরে তার ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১৫০ পরিবার, দুই নাম্বার ওয়ার্ডের প্রায় ৩শ’ পরিবার, ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রায় ৩শ’ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এছাড়া নয় নাম্বার ওয়ার্ডের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের বসতবাড়ি হারাতে হয়েছে।
তিনি খাঁয়ের হাট লঞ্চ ঘাট থেকে নয়নের খাল পর্যন্ত ব্লকবাঁধ স্থাপনের মাধ্যমে তিন ইউনিয়নের জনপদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষার দাবি জানান। এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, ভেঙে যাওয়া ও ধসে যাওয়া বাঁধ জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গঙ্গাপুর লঞ্চঘাটের পর থেকে দক্ষিণে সাড়ে ৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ ব্লক বাঁধের জরিপ স¤পন্ন হয়েছে। জরিপ শেষে ডিজাইন সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভোলা-২(বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল বলেন, তেঁতুলিয়ার বাঁধের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পানি স¤পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপির সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনতিবিলম্ভে বাঁধ সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বড় পরিসরে ব্লক বাঁধ নির্মান করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১০:১৮   ৪১২ বার পঠিত