বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

নদীতে স্কুল বিলীন: ভবনের অভাবে পাঠদান স্কুল মাঠে ॥ শিক্ষার্থী নিয়ে চরম বিপাকে শিক্ষকরা

প্রচ্ছদ » জেলা » নদীতে স্কুল বিলীন: ভবনের অভাবে পাঠদান স্কুল মাঠে ॥ শিক্ষার্থী নিয়ে চরম বিপাকে শিক্ষকরা
রবিবার, ১৯ জুন ২০২২



আদিল হোসেন তপু ॥
ভোলার দৌলতখানের হাজিপুর ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গনের কারণে ঐ ইউনিয়নের ৫০নং মধ্য হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবন বিলীন হয়ে গেছে এক বছর আগেই। ফলে স্কুলটি  স্থানান্তর করে আনা হয় মূল ভূগন্ডে। কিন্তু নতুন জায়গায় স্কুলের ভবন না থাকায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা চরম বিপাকে রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। এলাকার শিশুদের শিক্ষার মানোন্নয়নে দ্রুত একটি পাকা ভবন নির্মানের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্কুলটির নতুন ভবনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।
খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া। ভোলার দৌলতখান উপজেলার ৫০নং হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিজস্ব ভবন না থাকায় এক রকম ভাসমান উপায়ে চলেছে পাঠদান। গত বছর নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়টি। ৩ তলা ভবনের পুড়টাই মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনের শিকার হয়।

---

এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দৌলতখানের চরখলিফা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে গত ৩/৪ মাস আগে একজন শিক্ষানুরাগী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জমি অনুদান করলে একটি ছাপরা এক চালা টিন দিয়ে ওই বিদ্যালয়টিকে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তুু এক কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয়টিতে ছাত্রছাত্রীদের সংকুল্যান হয়না। তাই খোলা আকাশের নিচে প্রচন্ড গরমে রোদেপুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে তাদের ক্লাস করতে হয়।
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আনহা, সুরাইয়া, নয়ন, শাহীনসহ আরো অনেকে জানায়, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় আমাদের পড়াশোনা করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কারণ রোদে পুড়তে হয়। আর বৃষ্টি আসলে ভিজতে হয়। এখন স্কুলের মাঠে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। বৃষ্টি আসলে একটা ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে সবাইকে গাদাগাদি করে বসতে হয়। অনেক সময় বৃষ্টি আসলে শিক্ষকরা তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয় আমরা বাড়িতে চলেযেত হয়। এতে করে আমাদের পড়াশোনার অনেক বিঘœ হচ্ছে। আমরা যাতে সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে পাড়ি তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একট ভবন চাই আমরা।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক সজল কুমার মজুমদার বলেন, সুশিক্ষিত নাগরিক গড়ার লক্ষ্যে গত বছর নদী ভাঙ্গনের ফলে পুনরায় চর খলিফা ইউনিয়নে এনে বিদ্যালয়টি স্থাপন করি। কিন্তু অবকাঠামোর না থাকার কারণে আমরা শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যাহত হচ্ছে। একসঙ্গে কয়েকটি শ্রেনী কক্ষের পাঠদান একসাথে হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা ঠিক মতো মনোযগ দিয়ে করছেনা।  তবে এখানকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক আগ্রহ রয়েছে পড়াশোনা করার জন্য। এখন সরকারি একটা ভবন করে দিলেই হয়।
৫০নং মধ্য হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান বলেন, ভোলার দৌলতখানে ৫০নং মধ্য হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২০ সালে নলডুগি বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়টি ১০২ বছরের পুরানো প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩তলা বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মান করা হয়। কিন্তুু মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে ভবনটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তর হওয়ার পর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পরে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বাচ্চু চরখলিফা ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডে স্কুলের নামে ১৬ শতাংশ জমি কিনে দিলে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় এখানে স্থাপন করা হয়। এখন ভবনের অভাবে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ৮০জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। এখানে আশেপাশে বিদ্যালয় না থাকায় স্থানীয় অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি ও পড়াশোনা করাতে আগ্রহী। বিদ্যুৎ না থাকায় একটি কক্ষ থাকলেও তাতে ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য সুন্দর পরিবেশ আমরা দিতে পারছিনা। শিক্ষার্থীদের মাল্ডিমিডিয়া ক্লাসও নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। শিক্ষার মানোন্নয়নে ছাত্র-ছাত্রীদের দ্রুত এই বিদ্যালয়টির জন্য একটি পাকা ভবন প্রয়োজন।
দৌলতখান উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: হোসেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে চরাঞ্চল থেকে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে মূল ভূগন্ডের চরখলিফা ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে। এখন এখানে একটি মাঠের এক কোনায় কোন রকম পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। আমরা এই বিদ্যালয়ের জন্য একটি ভবন করে দেওয়ার জন্য  উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার বলেন, বিদ্যালয়টি মেঘনার ভাঙ্গনের কারণে পাশ্ববর্তী চরখলিফা ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য স্থানীয় এমপির সাথে কথা বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হবে।  দ্রুত এই বিদ্যালয় যেন একটি ভবন নির্মান করা হয়।
নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে এই ইউনিয়নের হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন নলডুগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৫৩:০১   ৪৫৭ বার পঠিত