বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

চিকিৎসার সরঞ্জাম ছাড়াই সন্তান প্রসব করিয়ে প্রসংশায় ভাসছেন তিন চিকিৎসক

প্রচ্ছদ » চরফ্যাশন » চিকিৎসার সরঞ্জাম ছাড়াই সন্তান প্রসব করিয়ে প্রসংশায় ভাসছেন তিন চিকিৎসক
বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২



ইমতিয়াজুর রহমান ॥
ভোলায় নদীর পাড়ে ঘুরতে গিয়ে নদীর পাড়েই এক গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন চিকিৎসক। এ ঘটনায় একটি ভিডিও প ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রশংসায় ভাসছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেকসের ওই তিন চিকিৎসক। বুধবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ১০টায় ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া প্রশান্তী পার্কে ঘুরতে গেলে এমন ঘটনার সম্মুখীন হন তারা।

---

জানা যায়, ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা থেকে মুক্তা আক্তার (২৫) নামের এক প্রসূতি মাকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার জন্য ভোলা চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকসে নিয়ে আশার উদ্দেশ্য ¯িপ্রডবোডে মনপুরা ত্যাগ করে চরফ্যাশন এর বেতুয়া ঘাটে পৌঁছালে প্রসূতি মায়ের প্রসব ব্যথা শুরু হয়। এবং ঘাটে লুটিয়ে পড়ে। তখন ঘাটে থাকা চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকসে এর চিকিৎসক ডা. ফাইয়াজ হোসাইন খান, ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন, ডা. নাহিদ হাসান বিষয়টি দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন এবং দায়িত্ব নিয়ে নরমাল ডেলিভারি করছেন গর্ভবতী মায়ের।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকসে এর মেডিকেল অফিসার ডা. ফাইয়াজ হোসাইন খান জানান, সারাদিনের কর্মব্যস্তাতার ক্লান্তি দূর করতে ও মেঘনা নদীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ বেতুয়া পার্কের মেঘনার ভাসমান চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন, ডা. নাহিদ হাসানের সাথে রাত ১০টার দিকে বেতুয়া ঘাটে পৌঁচ্ছাই। পৌঁচ্ছানোর কিচ্ছক্ষন পর প্রায় ১০ টা ৪০ বাজে তখন দেখতে পাই মাঝ নদী থেকে একটি স্পীডবোট এসে ঘাটে ভিড়ছে। একজন গর্ভবতী মা মুক্তার তার স্বামী সবুজ সহ তার পরিবারের তিন সদস্য বোট থেকে নামেন। নেমেই গর্ভবতী মা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং প্রস্রব ব্যথায় ছটফট করতে শুরু করলেন। বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরে ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন, ডা. নাহিদ হাসান ও আমি  ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কাজে নেমে পড়ি আমরা। ডা. সুরাইয়া গর্ভবতী মা কে আশ্বস্ত করে সেখানেই নরমাল ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করারা জন্য।
তিনি আরও জানান, আমি ও ডা. নাহিদ হাসান নরমাল ডেলিভারি জন্য প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসার সরঞ্জামের আনতে একটু দূরের ফার্মেসিতে যাই। সেখান থেকে  আমরা ব্লেড এবং কর্ড ক্ল্যাম্প ম্যানেজ করে আনতে আনতেই ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন কোনো ঝামেলা ছাড়াই নদীর পাড়ে ডেলিভারি সম্পন্ন করেন। কোনো গ্লাভস ছাড়াই তিনি কন্ট্রোলড কর্ড ট্র্যাকশন এর মাধ্যেমে গর্ভফুল (ঢ়ষধপবহঃধ) বের করে আনেন। পুরোটা ডেলিভারি তিনি সম্পন্ন করেন একদম খালি হাতে।
এ বিষয়ে আবাসিক অফিসার ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন জানান, আল্লাহরর রহমতে কোন ঝামেলা ছাড়াই একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন প্রসূতি মা। আমার এই ঘটনার স্বাক্ষী হতে পেড়ে নিজেকে তখন খুব সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে। প্রসূতি মা ও মেয়ে উভয়ই সুস্থ রয়েছে। গতকাল রাতে তাদের চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকসে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভর্তী করা হয়েছে। এবং আজ দুপুরে মোটামুটি সুস্থ হয়ে মা ও মেয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
এবিষয়ে প্রসূতি মুক্ত আক্তার এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আল্লাহ আমার মেয়ের জন্য উপর থেকে ডাক্তার রুপে ফেরেস্তা পাঠাইছে। তারা না থাকলে আমি ও আমার মেয়ে নির্ঘাত মৃত্যু হইতো। আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শিকুরিয়া আমার নতুন জীবন দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৫:৩৩   ৫০৮ বার পঠিত