বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

বিজয়ের ৫০ বছর ॥ প্রত্যাশা পূর্ণ হোক সামনের দিনগুলোতে

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বিজয়ের ৫০ বছর ॥ প্রত্যাশা পূর্ণ হোক সামনের দিনগুলোতে
শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২১



আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী আজ। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে এ দিনটি চির অ¤¬ান। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর এর ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে রাও ফরমান আলী ও নিয়াজীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলার মানুষের সুদীর্ঘ সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। তাই আজকের দিনটি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের চিন্তায়, চেতনায়, মননে চির অক্ষয় হয়ে আছে।
দু’শ বছরের ইংরেজদের গোলামীর পরে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান অর্জনের মাধ্যমে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটলেও আমরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের হাজারো শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হই। তাই পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের শুরু থেকেই আমাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিরোধ ও সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই শাসন শোষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধের সূচনা করেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকরা। এই সুদীর্ঘ সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে। তিনি তার ইতিহাস সৃষ্টিকারী যোগ্যতা দিয়ে পাকিস্তানের বুক চিরে ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই আজকের দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারসহ সকল নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সেক্টর প্রধানগণ, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও অংশগ্রহণকারী সকল দেশ প্রেমিক ভাইবোনদেরকে। তাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ফলে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা তথা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আমাদের লক্ষ লক্ষ শহীদ ভাইদের স্বপ্ন এবং যারা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি সেদিন কি চেয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার চেতনা কি ছিল? কোন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় লক্ষ লক্ষ শহীদ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন যুদ্ধ করেছেন এবং দেশের আপামর জনতা স্বাধীনতাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিল?
পাকিস্তানি আমলে আমাদের উপর শোষণ হয়েছিল তাই আমরা চেয়েছিলাম শোষণের অবসান। পাকিস্তানি আমলে ওরা রাজনৈতিক শাসন চালিয়েছে তাই আমরা চেয়েছিলাম রাজনৈতিক মুক্তি তথা স্বাধীন দেশ। পাকিস্তানি আমলে দেশ পরিচালনায় জনগণের মতামত নেয়া হতো না, মৌলিক গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তাই এদেশের মানুষ চেয়েছিল সত্তিকারের গণতন্ত্র। পাকিস্তানি আমলে অর্থনৈতিক শোষণ চলেছে নানাভাবে। তাই জনগণকে শোষণ থেকে মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া ছিল আমাদের স্বাধীনতার চেতনা। পাকিস্তানি আমলে ন্যায় বিচার ছিলনা, স্বাধীন দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই আমরা বলতে পারি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। আর চেতনা ছিল গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, শোষণমুক্ত সমাজ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা করা।
বিজয়ের অর্ধশতাব্দীর প্রান্তে এসে আমাদের মূল্যায়ন করা উচিৎ আমরা যা চেয়েছি তার কতটুকু পেয়েছি? এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক অবকাঠামোর উন্নয়নও যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, শোষণমুক্ত সমাজ কি আমরা পেয়েছি? পাইনি বরং আমরা যে সমাজ পেয়েছি সেখানে রয়েছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অবিচার, সামাজিক নানা অপরাধে ভরপুর একটি নষ্ট ভ্রষ্ট সমাজ ব্যবস্থা!
তাই আজকের দিনে আমাদের পর্যালোচনা করা উচিত কি আমরা চেয়েছি, আর কি আমরা পেয়েছি। আর শপথ গ্রহণ করা উচিত যা পাইনি আগামী দিনে সেইসব চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী তখনই সফল হবে যখন আমরা আমাদের না পাওয়া মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা গুলোকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারব।
আজকের এই দিনে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আমাদের যেসব প্রাতঃস্মরণীয় নেতৃবৃন্দ জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং যেসব ভাইয়েরা তাদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দিয়ে বিজয় অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছেন তাদের সকলের প্রতি আজকের দিনে জানাচ্ছি শ্রদ্ধা। পরম করুনাময় আল্লাহ তাদের সবাইকে ভালো রাখুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০২:৪৭   ৬৩৮ বার পঠিত