ঢাকা প্রতিনিধি ॥
জমিয়তে তালাবার নেতৃত্বে মাদরাসা ছাত্রদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফলেই মাদরাসা শিক্ষা বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার সমান্তরাল জাতীয় শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। মাদরাসা ছাত্রদের একক প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ ৯৩ বছর ব্যাপী যাবতীয় ষড়যন্ত্রের প্রাচীর ভেঙে মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী আদায় ও মাদরাসা শিক্ষাকে জাতীয় শিক্ষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে দাখিল-আলিম ও ফাযিল-কামিলের মান আদায়, মাদরাসা ছাত্রদের বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ, মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাস পুনর্বিন্যাস ও শিক্ষকদের বেতন ও মঞ্জুরী বৃদ্ধি, ছাত্রবৃত্তির প্রচলন, মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা ও এর স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, ১৯৮০ সালে প্রায় ১০০০ মাদরাসা বন্ধ করার হীন সিদ্ধান্ত বাতিল করণ, ১৯৮৩ সালে মাদরাসা বিধ্বংসী সিলেবাস বাতিল করণসহ কুচক্রি মহলের মাদরাসা বোর্ড স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল, মাদরাসা-ই- আলিয়া কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তর, ১৯৯৭ সালে ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়ন বাতিল করণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবী আদায়ে বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ঐতিহাসিক ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরণীয়। এমনকি ১৯৮৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া এবং ২০১৩ সালে ঢাকায় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও তালাবার আজন্ম রক্তঝরা আন্দোলনের ফসলমাত্র।
কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা হয়েছিল তা আজও বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বা নামফলকে ইসলাম কথাটা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে ইসলাম সুদূর পরাহত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় শুধুমাত্র থিওলজী ফেকাল্টির কয়েকটি বিভাগ বাদ দিলে শিক্ষাকাঠামো, পরিবেশ পুরোটাই একটি স্যাকুলার বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, কেবলমাত্র আলিয়া মাদরাসাগুলোর ফাযিল-কামিল ও অনার্স কোর্সগুলোর পরীক্ষা কার্যক্রম ও সার্টিফিকেট প্রদান ছাড়া ইসলামী পরিচয় দিতেও যেন লজ্জাবোধ করে। উপরন্তু ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম মাদরাসায় অনার্স কোর্সগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও যথাযথ মান বজায় রাখার জন্য যে শিক্ষক ও অবকাঠামো প্রয়োজন সে বিষয়েও তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
অপরদিকে মাদরাসা শিক্ষার ফাদার প্রতিষ্ঠান ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলো বিশেষত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলো জাতীয়করণ না করার মাধ্যমে মাদরাসাগুলোকে ছাত্রশুন্য করে দেয়া হচ্ছে এবং এগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম প্রায়। দেশে হাজার হাজর প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে; যার অধিকাংশই সরকারী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ১০০% বৃত্তি ও টিফিনসহ নানান ধরনের সরকারী সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার এবং সরকারী সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি শিক্ষকরাও বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। যা মাদরাসা শিক্ষাকে পঙ্গু করার অন্যতম একটি কৌশল। তাই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণ সময়ের দাবী।
তালাবার ৯৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয় করণ, শিক্ষার সর্বস্তরে ১০০ নম্বর ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ও ছাত্রদের হাফভাড়া সহ সকল ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান । গত ২৬ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার, বেলা ৩ টায় বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া’র ৯৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রিয় সহ সভাপতি শাহ্ মুহাম্মদ নাজিউল্লাহ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক মওলানা মুহাম্মাদ এরশাদ উল্যাহ ভূঁইয়া। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভোলা দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা সুরুজুজ্জামান, প্রধান সম্পাদক মাওলানা কাজী সাইফুদ্দীন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আমীর ও দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক অধ্যক্ষ শওকাত হোসন সাবেক প্রধান সম্পাদক মাওলানা ফারুক আহমদ, সহ সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা এ এম এম কামাল উদ্দীন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, সহ-সভাপতি মাওলানা সাইফুল্লাহ খান, সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ভূঞাঁ, মাওলানা শাহ জালাল, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাদির, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকসহ সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ।