বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় বিপাকে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে

প্রচ্ছদ » অর্থনীতি » জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় বিপাকে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে
শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১



আদিল হোসেন তপু ॥
জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোলার উপকূলের কয়েক লাখ জেলেরা। বেশি দরে তেল কিনে নদ-নদীতে গিয়ে পর্যাপ্ত মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন জেলেরা। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাড়া। এ কারণে অনেকে জেলে নদীতে মাছ শিকারে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন। ঘাটে সারি সারি ট্রলার বেঁধে রেখেছেন জেলেরা। আর মৎস্য বিভাগ বলছে জেলেদের সমস্যার কথা চিন্তা করে মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ভুর্তকি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

---

নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলা। এখানে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন কয়েক লাখ জেলে। এখানকার মৎস্যজীবীদের মাছ আহরণের একমাত্র মাধ্যম ডিজেল চালিত ট্রলার। সম্প্রতি হঠাৎ করে ডিজেলের দাম বাড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা। জেলেরা বলছেন, এ বছর ভরা মৌসুমেও নদীতে একদিকে মিলছেনা কাঙ্খিত ইলিশ। এখন শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম। সাগর ও নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয় তার তুলনায় মাছ কম ধরা পরে। যাও ধরা পড়ছে তাও মাছ বিক্রির বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে ডিজেল কিনতে। এমন সময় ডিজেলের দাম বাড়ানোর দিশাহারা হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ জেলে। তাদের চোখেমুখে যেন রাজ্যের হতাশ। এ পেশা ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত তাদের আর কোনো উপায় নেই বলে জানান, অনেক জেলে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাড়া। এ কারণে অনেকে জেলে নদীতে মাছ শিকারে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
ভোলার ইলিশা চডার মাথার ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, এ বছর এমনেই নদীতে মাছ ছিলো না। তার কারণে মহাজনের ধার দেনা শোধ করতে পারেনায়। তার উপরে অভিযানে অভিযানে পুরা সিজন শেষ করলো। এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়া যেনো জেলেদের জন্য মরার উপর খারাড় ঘা হয়ে ধারালো। কারণ একটা ট্রলার নদীতে গেলে তার ২০-৩০ লিটার তৈল লাগে। আর বড় বোটে লাগে ৫০ লিটার। এখন লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় এখন জেলেরা নদীতে নেমে খরচ পোষাইতে পারছেনা। সেই কারণে অনেক জেলে এখন মাছ ধরতে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিছে। ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সমক্ষিণ হচ্ছি। আর জেলেরা তো তাদের ধার দেনা রয়েই গেলো।
ধনিয়া মৎস্য ঘাটের ইসমাইল মাঝি বলেন, তেল দিয়া শুধু লঞ্চ আর বাস চলেনা। তেল দিয়া আমাগো জেলেগো পেট চলে। এই তেল না হইলে আমরা নদীতে নামতে পারিনা। আগে তেলের দাম ৬০ টাকা আছিল। সেই সময় আমরা হাজার হাজার টেকা দেনা হইয়া গেছি দোকানে। এখন তেলের দাম বাইরা ৯০ টাকা হইছে। এখন আমরা আগের দেনা দিমু। নাকি নদীত নামুম। এখন কোন বাগিজগি নদীতে যাইতে চায়না। আবার নৌকায় গেলে মাছ পায় ২ হাজার টাকার। দোকানে বাকি ৩ হাজার। তাইলে খরচ চালামু কেমনে আর সংসারই চলবো কেমনে।
আরেক জেলে কামাল হোসেন বলেন, মা ইলিশের ২২ দিনের অভিযান থাকায় আমরা নদীতে নামতে পারিনাই। এখন আবার জাটকা রক্ষার অভিযান চলছে। এখন নদীতে নেমে মাছ ধরমু তার মধ্য দিয়ে সরকার তেলের দাম বাড়াইছে। নদীতে গেলে ৫ লিটার থেকে ১০ লিটার নিয়া নদীতে যাই। মাছ পাই ২ হাজার টাকার। খরচ  বাদ দিয়া হাতে তেমন কিছুই থাকেনা। এখন সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হয়।
ইলিশা ঘাটের জেলে বাবুল বলেন, আগে তেলের দাম কম ছিলো। তখন নদীতে যায়া খরচ বাদ দিয়া মোটামুটি পেষাইতে পারছে। এখন সরকার হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ায় নদীত যায়া মাঝিরা পোষাইতে পারতাছেনা। যেই মাছ পায় সেই মাছ বেইচা মাঝিগো খরচ উঠেনা। যার কারণে নদীতে এখন জেলেরা কম যায়। যদি সরকার তেলের দাম ইকটু কমাইতো তাহলে আমরা জেলেরা নদীত যাইতে পারতাম।
ভোলা সদরের ধনিয় ঘাটের বশির মাঝি বলেন, আগে দেখতাম ২/৩ টাকা করে তেলের দাম বাড়াইতো সরকার। আর এখন হঠাৎ করে এক লাফে ২০ থেকে ২৫ টাকা তেলের দাম সরকার বাড়াইয়া দিছে। এত টাকা বাড়াতে জেলেরা খরচ পোষাইয়া উঠতে পারতাছেনা। তেলের দাম লিটার প্রতি বাড়ায় জেলেদের মাছ ধরার ব্যায় বাড়ছে ত্রিশ শতাংশ, আর এতে  মৎস্য অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন জেলেরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি ভোলা সদর উপজেলার সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি  বলেন, উপকূলের জেলেদের মৎস্য অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছে। এভাবে তেলের দাম বাড়লে জেলেরা এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে বলে মনে করেন। তখন মৎস্য অর্থনীতির উপরে প্রভাবে পরতে শুরু করবে। উপকূলের কয়েক লাখ জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকার যেন তেলের দাম কমিয়ে দেয় তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: জামাল হোসাইন বলেন, দ্বীপজেলা ভোলার একটা বড় অংশ মৎস্যজীবী পেশার কিংবা ব্যবসার সাথে জড়িত। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় জেলেদের উপর কিছুটা প্রভাব পরতে শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি অবগত আছি। জেলেদের ওপরে কিছুটা চাপ কমাতে আমরা মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ভোলায় জেলায় ১ লাখ ৪২ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। আর নিবন্ধের বাইরে রয়েছে আর দেড় লাখ জেলে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৩৩   ৫৩৮ বার পঠিত