বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোলা শহরের যানজট সমস্যা: প্রয়োজন আশু পদক্ষেপ

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » ভোলা শহরের যানজট সমস্যা: প্রয়োজন আশু পদক্ষেপ
শনিবার, ৬ নভেম্বর ২০২১



ভোলা শহরের যানজট সমস্যা ক্রমেই কঠিন অবস্থায় রূপ নিচ্ছে। বর্তমানে সদর রোডে সবসময়ই কমবেশি যানজট লেগে থাকে। সদর রোডের তিন মিনিটের রাস্তা পার হতে অনেক সময় এক ঘণ্টার বেশি লেগে যায়। আবার কখনোবা ঘন্টার পর ঘন্টা রিকশায় বসে থাকতে হয়। সে অবস্থায় অনেকে যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে চলে যায়। আবার বাধ্য হয়ে মহিলা, অসুস্থ, বয়স্ক ও মালামাল বহনকারীরা ঘন্টার পর ঘন্টা তীর্থের কাকের মত যানজট অবসানের জন্য বসে থাকে।
ভোলার মতো একটি মফস্বল শহরে এ ধরনের অবস্থা হবে এটা অতীতে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। অথচ এখন সে অবস্থার মুখোমুখি আমরা সবাই। বিশেষ করে গত প্রায় দু’বছরের করোনাকালে অবস্থাটা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে, বিগত করোনাকালে ভোলার হাজার হাজার যুবক পেশা হারিয়ে বেকার অবস্থায় ভোলায় চলে আসে। এখানে এসে তারা অটোরিকশা, বোরাক, মিশুক ইত্যাদি কিস্তিতে অথবা সমিতির টাকা লোন নিয়ে কিনে নিজেরাই এসব চালায়। আর আমাদের দেশে বর্তমানে এসব যানবাহন রাস্তায় এমনকি হাইওয়েতে চালাতেও কোনরকম লাইসেন্স কিংবা জবাবদিহিতার প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। এরা ভোলার বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ করে ইলিসা, পশ্চিম ইলিশা, শিবপুর, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া. দিঘলদীসহ বিভিন্ন গ্রামে বাস করে। প্রতিদিন সকালবেলা এরা তাদের যানবাহন নিয়ে শহরে চলে আসে এবং সারাদিন শহরে প্যাসেঞ্জার বহন করে সন্ধ্যায় কিংবা রাতে যার যার বাড়িতে ফিরে যায়। শহরে কিংবা হাইওয়েতে যানবাহন চালানোর কোনো প্রাথমিক জ্ঞান  এদের নেই, এদের কোন ট্রাফিক আইন এর উপরে প্রশিক্ষণ নেই, ফলে এরা যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠায় অথবা নামায়। আবার রাস্তার যেকোনো জায়গায় তারা গাড়ি ইউটার্ন করে ঘুরিয়ে নেয়। এই সবকিছুই যানজটের কারণ। অন্যদিকে ভোলা শহরে কিছু কিছু জায়গায় ট্রাফিক থাকলেও ট্রাফিকের মূল কাজগুলো নেই বললেই চলে। ভোলার একমাত্র প্রধান সড়ক সদর রোডের দুই পাশেই মার্কেট এবং দোকানের সামনে সমানে মোটরসাইকেল অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। পাশাপাশি রিকশা, অটোরিকশা, বোরাক, মিশুক ইত্যাদি যেখানে সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ফলে রাস্তার তিনভাগের দুইভাগ পার্কিং হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যেটুকু যানচলাচলের জন্য থাকে তার মধ্যে আবার মাল পরিবহনকারী পণ্য পরিবহনকারী ঠেলাগাড়ি, ট্রলি, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচল করে। এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত রাস্তার স্বাভাবিক চলাচল আটকে যায় এবং জনগণ যানজটের দুর্ভোগে পতিত হয়। ইট পাথর বালিসহ নানা ধরনের মালামাল পরিবহনকারী যেসব বড় যানবাহন দিনের বেলা ভোলা শহরের সড়কসমূহ চলা নিষিদ্ধ ছিল সেগুলো এখন প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। এটাও যানজটের একটি প্রধান কারণ।
আমরা মনে করি যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা তথা নিরসন করে জনগণকে সড়কপথে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া কোন কঠিন বিষয় নয়। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু নিয়ম নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়কে যেসব যানবাহন চলাচল করবে তাদের প্রত্যেকেরই লাইসেন্স থাকা উচিত। গ্রাম অঞ্চলে এই লাইসেন্স ইউনিয়ন পরিষদ এবং শহরে পৌরসভার পক্ষ থেকে গাড়ির লাইসেন্স এবং ডাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা থাকা অপরিহার্য। সড়কে ড্রাইভিং করতে হলে তাদেরকে কমপক্ষে একদিনের একটি প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া উচিত যাতে তারা ট্রাফিক আইন এর মৌলিক নিয়মকানুনগুলো জানতে পারে এবং সেগুলো মেনে চলার মানসিকতা তাদের মধ্যে তৈরি হয়। ভোলায় কত যানবাহন প্রয়োজন এবং বর্তমানে কি পরিমান যানবাহন রয়েছে সেটাও পরিসংখ্যান ওনিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এর সঙ্গে সঙ্গে সড়কগুলোকে যানবাহনের জন্য উপযোগী করা প্রয়োজন। এ জন্য রাস্তার পাশের অবৈধ পার্কিং স¤পূর্ণ বন্ধ করা উচিত। পৌরসভায় মার্কেট নির্মাণের ক্ষেত্রে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং পার্কিংয়ের জন্য কিছু কিছু জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া প্রয়োজন। ফুটপাতগুলো পরিষ্কার করে দেয়া উচিত, যাতে পায়ে-হাঁটা পথিকদের সুবিধা হয়। এর পাশাপাশি যারা মোটরসাইকেল/বাইক চালায় তাদের জন্য কিছু নিয়ম কানুন বেঁধে দেয়া উচিত। কারণ নিয়ম-কানুনের অভাবে এরাই বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার এখন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এককথায় সড়কগুলোকে পরিষ্কার করে শুধুমাত্র বৈধ যানবাহনের জন্য চলাচলের জন্য নিশ্চিত করা, যানবাহনও ড্রাইভারদের লাইসেন্স প্রদান, এবং তাদেরকে ট্রাফিক আইন বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করাসহ  এই সকল কাজ গুলোকে সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে স¤পন্ন করতে পারলেই যানজটের অভিশাপ থেকে জনগণ মুক্তি পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আশা করব জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে সাধারণ জনগণকে সুস্থভাবে সড়কে চলাচল করার সুযোগ করে দেবে। একই সঙ্গে এখানে সেখানে যে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তাও এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৩:১৯   ৫৮৭ বার পঠিত