বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

রাজাপুরে জনসংখ্যা না থাকলেও তালিকায় ৮ হাজার ভোটার ॥ আগের ওয়ার্ড ফিরে পেতে চায় ওরা

প্রচ্ছদ » জেলা » রাজাপুরে জনসংখ্যা না থাকলেও তালিকায় ৮ হাজার ভোটার ॥ আগের ওয়ার্ড ফিরে পেতে চায় ওরা
সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১



আদিল হোসেন তপু ॥
মেঘনা নদীর ভাঙনের কারণে ভোলার রাজাপুরের ২টি ওয়ার্ড বিলিন হয়ে যাওয়ায় ওয়ার্ড পূনর্বিন্যাস করে গেজেট প্রকাশের পর চড়ম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি নদীতে সাবেক ১নং ওয়ার্ডটি বিলিন হওয়ায় ৩নং ওয়ার্ডটিকে ১নং ওয়ার্ড করায় আগের তিনটি ওয়ার্ডের ভোটার এক ওয়ার্ডে হওয়ায় ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার। যার কারণে যেমন ঠিকমত সরকারি সাহায্য সহযোগীতা যাচ্ছেনা, তেমনি ভোটার আইডি কার্ড ও জমির কাগজপত্র পরিবর্তণে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। তাই তারা আগের ওয়ার্ডটি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

---

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডটি ২৫ বছর আগে মেঘনা নদীর ভাঙনের ফলে বিলিন হয়ে যায়। এর কিছু বছর পর ওই এলাকায় মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠে ভোলার চর, বঙ্গের চর ও কানি বগার চর নামে তিনটি বড় চর। আর ওই চরগুলেতে বিলিন হয়ে যাওয়া দুই ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করে আসছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয় পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ১২ ও ১৩ ধারা মোতাবেক ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডিলিমিটেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করে তার প্রদত্ত প্রতিবেদন মোতাবেল রাজাপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড পূনর্বিন্যাস করে ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্তভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। যার ফলে বিশেষ করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ডকে ১ নম্বর ওয়ার্ড করায়। পুরো ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার ভোটার হলেও পূনর্বিন্যাসে ওই ওয়ার্ডে ৮ হাজার ভোটার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি আগের ওয়ার্ডে প্রায় ৩ হাজার ভোটার থাকায় সরকারি সব ধরণের সহযোগীতা পেতেন, আর এখন ভোটার সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঠিকমত পান সহযোগীতা। এছাড়াও ওয়ার্ড পরিবর্তণ হওয়ায় নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ডের ওয়ার্ড পরিবর্তণ, বসত ঘর বাড়ির ও জমির কাগজপত্র ঠিক করতে ভূমি অফিসে অনেক হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। তাই তারা আগের ওয়ার্ড ফিরে পেতে চান।
স্থানীয় বাসিন্দা আদম আলী খান, কালাম রাঢ়ী সহ আরো অনেক স্থানীয় জানান,নদী ভাঙ্গনের ফলে রাজপুর ইউনিয়নে রামদাসপুর এলাকার ১ও ২ নং ওয়ার্ড নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যেখানে বসবাস করছি  এটি ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে আগে আড়াই থেকে তিন  হাজার ভোটার ছিলো। এখন ভোটার দেখানো হচ্ছে সাড়ে আট হাজার। এত্ত মানুষ তো এই এলাকায় নেই । তাহলে ভোটার কিভাবে সাড়ে আট হাজার দেখানো হলো?  সেটা আমরা জানতে চাই।
স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন মাঝি, আব্দুল মন্নান মাঝি,আরিফ হোসেন নয়ন,হাসিনা বেগম বলেন, বর্তমানে রামদাসপুরের সাবেক ৩নং ওয়ার্ডকে বাদ দিয়ে নতুন গেজেটে ১নং ওয়ার্ড দেখানো হয়েছে। ফলে আমরা স্থানীয়রা নানা জটিলতায় পরতে হয়েছে। আমরা এখন সরকারের যে বরাদ্ধ তা সঠিক ভাবে পাচ্ছিনা। এই এলাকার মানুষ নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের বসবাস। ওয়ার্ড বিভিক্তি করনের কারনে আমরা সরকারের ভিজিএফ, ভিডিডি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ নানা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের এলাকায় কোন উন্নয়নও হচ্ছেনা। বিশেষ করে ভোটের সময় যারা চরে থাকে তাদের অনেক ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। ভোট দিয়ে হলে তাদের মেঘনা নদী পারি দিয়ে এসে ভোট দিতে হয়। এই ভোট দিতে এসে অনেকেই নানা ধরণের ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। তাই এখানে একটি ওয়ার্ড না দেখিয়ে ভোলার চর,কানি বগার চর, নৌব্বার চর নিয়ে পৃথক আরো ২টি ওয়ার্ড করলে ঐখান কার মানুষ নির্ভিগ্নে ভোট দিতে পারতো ও একই সাথে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা সম বন্টন হারে পেতে এই ইউনিয়নের সকল জনগন। এখানে সব মিলিয়ে একটি ওয়ার্ড করায় পুরো চরের মানুষ নানান ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই এই চরের মানুষ এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় সরকারের কাছে।
রাজাপুর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান খান বলেন, ২০১৬ সালে রাজাপুর  ইউনিয়ন ওয়ার্ড পূনর্বিন্যাস করা হয়। ওয়ার্ডে পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোট দিতে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই সাধারন মানুষের কথা চিন্তা করে অন্তত সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ডটিকে ৩নং ওয়ার্ড হিসেবে পূর্ন বহাল করার জন্য দাবি জানান সরকারের কাছে। একই সাথে অন্যান্য চরে যারা বসবাস করেন তাদের নিয়ে ভিন্ন ওয়ার্ড তৈরি করে সেখানকার মানুষের  নাগরিক অধিকার পাওয়ার পাশাপাশি ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরি করার দাবি জানান।
তবে ভোলা সদর নির্বাচন অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান খান বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার দাবি রাজাপুর ইউনিয়নের ভোটার তালিকার পূর্ণ বিন্যাস কাজ করেন তারা ২০১৮ সালে। ওই সময় কেউ আপত্তি দেননি। সিমানা পূনর্বিন্যাসের জন্য উপজেলার নির্বাহী অফিসারে কাছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবেদন করলে হয়তো তাদের সমস্যা সমাধান হবে। এবং আমাদের নির্দেশ দিলে আমরা ভোটার পূনর্বিন্যাস করবো।
ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৩৩৪৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭৪৫৮ জন ও মহিলা ভোটার ১৬০২৮ জন। এর মধ্যে অর্ধেক জনসংখ্যাই বিভিন্ন চরে বসবাস করে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৫:২৫   ৭৫১ বার পঠিত