বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

ইভ্যালিকে নিয়ে হচ্ছেটা কি?

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » ইভ্যালিকে নিয়ে হচ্ছেটা কি?
বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১



ইভ্যালির এমডি রাসেল সাহেবকে পুনরায় রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে, আর তার স্ত্রীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ইভ্যালির পরিণতিও যুবক কিংবা ডেসটিনির মতোই হবে! তাহলে ইভ্যালিতে বিনিয়োগকৃত হাজার কোটি টাকার হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের টাকা কি ফেরত পাবে না? এটাই এখন প্রশ্ন?
ই-কমার্স এখন বিশ্বব্যাপী সু-প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দেশে দেশে ই-কমার্স এর মাধ্যমে কেনাবেচা হরদম চলছে। কই বাংলাদেশের মতো এ ধরনের ঘটনা তো আর কোথাও ঘটছে বলে পত্রপত্রিকায় দেখা যায়নি। তাহলে আমাদের এখানে এ অবস্থা হচ্ছে কেন? অনেকেরই ধারণা ই-কমার্স তথা এ ধরনের ব্যবসা লালন পরিষেবা পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা করা প্রয়োজন ছিল তা করা হয়নি।
অনেকে প্রশ্ন তোলেন ইভ্যালি ৫০%, ৬০% পার্সেন্ট ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করে কিভাবে? ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে পত্র-পত্রিকা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তারিত এসেছে। আমরা জানি একটি পণ্য যে দামে খুচরা বিক্রি হয় তার চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দামে পণ্যটি তৈরি হয়। এরপরে চারভাগের একভাগ ব্যায় হয় ওই পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার ইত্যাদিতে। কারখানা থেকে ডিলার /এজেন্ট পাইকারি দোকান হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আসতে আরো ২৫/৩০ পার্সেন্ট চলে যায়। খুচরা বিক্রেতার কাছে আসলে সে ১৫ থেকে ২০ পারসেন্ট লাভে বিক্রি করে থাকে। এখন যদি কেউ এই পণ্যটি সরাসরি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে নিয়ে এসে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে তার পক্ষে ৫০% ছাড় দেওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। আর এ কারণেই ইভ্যালির বিনিয়োগকারীরা  তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। বরং তারা চায় রাসেল সাহেবকে ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করতে দেয়া হোক। বিনিয়োগকারীরা আরো সময় দিতে প্রস্তুত। তাহলে তাদের পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বিলম্বে হলেও বিনিয়োগকৃত টাকা হারাবে না। রাসেল সাহেবদের মামলা চলাকালীন লাইভে শত শত গ্রাহক এবং সাধারণ মানুষদের কমেন্ট ছিল ‘সেভ ইভ্যালি’। রাসেল সাহেবদেরকে ছেড়ে দেয়া এবং ব্যবসা করতে দেয়ার জন্য অসংখ্য কমেন্ট দেখলেই এটা স্পষ্ট হয়। তাদের কেউ কেউ লিখেছে, আমরা টাকা ইনভেস্ট করেছি আমরা তাকে সময় দিতে চাই, সেখানে সরকারের আপত্তি থাকবে কেন? অনেকে বলেন ইভ্যালির কম মূল্যে পণ্য দেয়ার ফলে যাদের সমস্যা হয়েছিল, যাদের ব্যবসা লাটে ওঠার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তারাই বিভিন্ন দিকে প্রভাব খাটিয়ে বর্তমান এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
আমরা মনে করি ই-কমার্স সঠিক ভাবে চলার স্বার্থে ইভ্যালির মত যারা ব্যবসা করছে তাদেরকে সহযোগিতা করা, তাদের উপরে নজরদারি করা, মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সেল থাকা উচিত ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ইভ্যালির ব্যাপারে যখন অভিযোগ উঠেছে তখনও ইভ্যালির কার্যক্রম নজরদারি নিয়ন্ত্রণ ও সহযোগিতা করার জন্য একজন প্রশাসক দেয়া যেত এবং তাদেরকে এই ব্যবসা অব্যাহত রেখে যাতে সবার পণ্য পৌঁছে দিতে পারে সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। এবং আস্তে আস্তে প্রয়োজনবোধে ছাড়ের পরিমাণ কম করে যাতে উঠে দাঁড়াতে পারে সেই ব্যবস্থা ও সহযোগিতা করাটাই ছিল সরকারের প্রধান কাজ। কিন্তু তা না করে যেভাবে তাদেরকে মামলা/ রিমান্ড দেয়া হচ্ছে তার পরিণতিতে হয়তো তাদেরকেও যুবক এবং ডেসটিনির মতো হবে। তাদের মতো ইভ্যালির পরিচালকদেরকেও জেলখানায় আটকে রাখা হবে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে যেসব হাজার হাজার মানুষ তাদের টাকা ইনভেস্ট করেছে তাদেরকে সর্বস্বান্ত হতে হবে। এর পরিণতিতে তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার পাওয়ার নূন্যতম কোন সম্ভাবনা অবশিষ্ট থাকবে না।
আমরা মনে করি বিষয়টি নিয়ে সরকারের আরও গভীর ভাবে ভাবা উচিত। ই-কমার্সের বিকাশের স্বার্থে বিনিয়োগকারী হাজার হাজার স্বল্প আয়ের মানুষের স্বার্থে ইভ্যালির ব্যবসা টিকিয়ে রেখে কিভাবে জনগণ তাদের পণ্য পেতে পারে সেটার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করা হোক। অযথা হয়রানি এবং জেল জুলুম করে যুবক ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে বহু মানুষকে পথে বসানোর অবস্থা বন্ধ করা হোক।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৩:১৭   ৪৫৫ বার পঠিত