বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

প্লিজ… টালবাহানা বাদ দিয়ে সকল শিক্ষা সমূহ খুলে দিন

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » প্লিজ… টালবাহানা বাদ দিয়ে সকল শিক্ষা সমূহ খুলে দিন
বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১



বৈশ্বিক মহামারী করনার উছিলায় গত দেড় বছর যাবত বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ব্যক্তি সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে এর মারাত্মক কুফল বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রথমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পুরো সময়টা বিভিন্ন রকম দুষ্টামি, বাদরামি, খেলাধুলা, কেউ কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম, মোবাইল টিপাটিপি, ইন্টারনেটের বিভিন্ন গেম, অশ্লীলতা বেহায়াপনাসহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হচ্ছে। ছাত্রীদের একটি বড় অংশের ইতিমধ্যেই বিবাহ শাদী হয়ে গেছে। মহা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা অনেক ঘটেছে। এককথায় লেখাপড়ার যে স্বাভাবিক গতি ছিল সেই গতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা এখন মুখ্যত অপরাধী অকর্মণ্য এবং অন্ধকার ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
করোনা শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বেই করোনা চলছে। বাংলাদেশের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। অথচ সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘকাল যে তিনটি দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে মোট মাত্র ১১টি দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। বাকি সকল দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে চলছে। অথচ বাংলাদেশে শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এখনও খোলার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন রকম বক্তব্য আসছে। সম্প্রতি তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদেরকে স্কুলে যেতে বলছে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেতে পারবে না। প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষকরাই স্কুলে গিয়ে কি করবে? গল্পগুজব করবে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বলবে ঘুমাবে চা খাবে ঘোরাঘুরি করবে এরপর চলে আসবে। তাতে ফায়দাটা কি? আবার পর্যায়ক্রমিকভাবে স্কুল খোলা হবে বলে কেউ কেউ বলছে। আবার করণা বিস্তার শূন্যতায় নেমে আসলে স্কুল খোলা হবে, এ ধরনের কথাও বলা হচ্ছে। এদের কথাবাত্রা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে যায় যে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে শিক্ষা। কারণ দেশে এখন সবকিছু আগের মত স্বাভাবিক ভাবে চলছে। দেশের রাজনীতি চলছে, মিটিং মিছিল চলছে, মন্ত্রীদের সভা-সমিতি চলছে, হাটবাজার চলছে, যানবাহন চলছে, দোকানপাট রাস্তাঘাট সবকিছু সমান গতিতে চলছে। শুধুমাত্র করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা কি স্বাভাবিক? আমাদের মনে হয় এর পেছনে কোনো বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার। শিক্ষা জাতিকে শিক্ষা বিমুখ করে ভবিষ্যতে অশিক্ষিত এবং মূর্খ একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার।
শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে তাদের করোনা হবে (!)এজন্য তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। আসলে কি কোন শিক্ষার্থী করোনার ভয়ে ঘরে দরজা আটকে বসে থাকে? নিশ্চয়ই না, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে তারা এখন যাচ্ছেতাই করে যেমন খুশি তেমন চলছে, হাটে বাজারে রাস্তাঘাটে ভিড় করে তারা চলাফেরা করছে। তারা একসাথে এক মোবাইল ১০ মাথা একত্রিত করে একটি মোবাইল দেখছে। এইভাবে নানা ধরনের ধ্বংস হওয়ার সকল কাজে সম্মিলিতভাবে অংশ নিচ্ছে। দরিদ্র হতদরিদ্র ও নি¤œ মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই বিভিন্ন কাজে যোগদান করেছে। আমি অনেককে জানি যারা কলেজ মাদ্রাসা স্কুল ছেলে ছেড়ে এখন রাজমিস্ত্রীর যুগালী হিসেবে কাজ করে। অথচ এইসব শিক্ষার্থীরা শিক্ষার চলমান ট্রাকে থেকে সারাদিন শিক্ষা লেখাপড়ার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো। ক্লাস করতে হতো, কোচিং করতে হতো, প্রাইভেট পড়তে হতো, ঘরে বসে পড়াশোনা তৈরি করতে হতো, সেই কাজগুলো থেকে বঞ্চিত করা করা হলো কেন? কার স্বার্থে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
আমরা মনে করি করণা মহামারীর কারণে কঠিন সময়ে বিশেষ বিশেষ অঞ্চল ভিত্তিক কিছু প্রতিষ্ঠান ১০/১৫ দিন বন্ধ রাখা যেত ।এর বেশি বন্ধ রাখার কোনো প্রয়োজন কখনো ছিল না। করণা সময়ের উপযোগী করে শিক্ষার্থীদের বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হতো। প্রয়োজনবোধে ২/৩ শিফট করে প্রয়োজনে একদিন পর একদিন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতো। নিরাপদ দূরত্বে বসা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকার বন্দোবস্ত সবার আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা উচিত ছিল। সেভাবে শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই এই করোনাকাল অতিক্রম করা সম্ভব ছিল বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু নানা ধরনের বিভিন্নমুখী সিদ্ধান্ত দিয়ে গোটা শিক্ষক সমাজকে বাড়িতে বসিয়ে রেখে শিক্ষার্থীদের ধ্বংসের পথে ছেড়ে দিয়ে কার স্বার্থে কাজ করা হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। দেশের শিক্ষা শিক্ষক সংগঠন গুলো এবং ছাত্র সংগঠনগুলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার জন্য কোন আন্দোলন করেনি, কোন দাবি-দাওয়া তুলেনি। এটাও জাতির জন্য একটি দুঃখজনক বিষয়। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে অভিনন্দন জানাচ্ছি যিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ক্লাস চালু করেছেন এবং তার ছাত্ররা ও সেখানে নিয়মিত ক্লাস করছেন তাকে আমাদের অভিনন্দন।
এমতাবস্থায় আমরা অবিলম্বে কোনরকম বিলম্ব না করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে নির্ধারিত নিয়মে ক্লাস চালু করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। তথাকথিত অ্যাসাইনমেন্ট আর বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি চলছে বলে শিক্ষা সম্পর্কিত কেউ কেউ আত্মতৃপ্তির পাচ্ছে। এসব শুধুই আত্ম সান্তনা সান্তনা মূলক বাণী। এর দ্বারা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের জন্য যা প্রয়োজন তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দেবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৩:১৪   ৫৩১ বার পঠিত