জাতীয় মঙ্গলের কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের স্মরণে ঢাকায়ও ভোলায় বিভিন্ন স্মরণসভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান

প্রচ্ছদ » সাহিত্য ও সংস্কৃতি » জাতীয় মঙ্গলের কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের স্মরণে ঢাকায়ও ভোলায় বিভিন্ন স্মরণসভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান
শনিবার, ৭ আগস্ট ২০২১



সাহিত্য পাতা ডেস্ক ॥
জাতীয় মঙ্গলের কবি ভোলার কৃতী সন্তান মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ৯৩ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালের ১লা আগস্ট ইন্তেকাল করেন। তিনি তার সুযোগ্য পুত্র সচিব এম মোকাম্মেল হকের ঢাকাস্থ বাসায় থাকাকালীন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার কফিন হেলিকপ্টারযোগে গলায় নিয়ে আসা হলে হাজার হাজার মানুষ হেলিপোর্ট গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। ভোলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জানাজার পর তাকে পারিবারিক গোরস্থানে পরানগঞ্জ তালুকদার বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ওই সময় ভোলার এসডিও ছিলেন আবদুল হালিম। ভোলার সাহিত্য সংস্কৃতি ও রাজনীতির অন্যতম প্রাণপুরুষ মোশারেফ হোসেন শাজাহান ও তৎকালীন এসডিও সাহেব উদ্যোগ নিয়ে কবি মোজাম্মেল হক স্মৃতি সংসদ গঠন করেন। স্মৃতি সংসদের সভাপতি ছিলেন মোশারেফ হোসেন শাজাহান এবং সাধারন সম্পাদক ছিলেন প্রবীণ সমাজকর্মী শফিউল্লাহ মিয়া। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন ভোলা টাউনহলে কবি মোজাম্মেল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তৎকালীন ভোলা বার এর সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুল একরাম, ভোলা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক মীজানুর রহমান, প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি অধ্যক্ষ ফারুকুল রহমান, রেড ক্রিসেন্ট স¤পাদক মোফাজ্জল হোসেন শাহীন, ন্যাপ নেতা এডভোকেট একেএম শাহজাহান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ফরিদ হোসেন বাবুল, বিএনপি’র মোস্তফা কামালসহ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন স্মৃতি সংসদ সভাপতি মোশারেফ হোসেন শাজাহান, প্রধান অতিথি ছিলেন এম মোকাম্মেল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন এসডিও আব্দুল হালিম। সে বছর খরকী ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং পরাণগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সবায় কবিপুত্র এম মোকাম্মেল হক, এসডিও আব্দুল হালিম, স্মৃতি সংসদের সভাপতি মোশারেফ হোসেন শাজাহান, এছাড়াও সফিউল্লাহ মিয়া, সিদ্দিক ডিলার, ডাক্তার খলিলুর রহমান, মিল্টন মিয়া, হাসান মাসুদ কাঞ্চন মিয়া, ডা: আব্দুল মান্নানসহ স্মৃতি সংসদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

---

১৯৭৮ সাল থেকে স্মৃতি সংসদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মুহাম্মদ শওকাত হোসেন। ওই বছর থেকে প্রতিবছর স্মৃতি সংসদের নেতৃবৃন্দ তৎকালীন এসডিও সাহেবদের সহ খরকি কবি মোজাম্মেল হক ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ,পরাণগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ভোলা টাউন হলে কবি মোজাম্মেল হকের স্বরণসভা আয়োজন করত। এসব সভায় কবি পরিবারের পক্ষ থেকে জিয়াউল কবিদৌহিত্র জিয়াউল কুদ্দুস লিয়াকত, পৌত্র মুজাহিদুল হক এমরান, আশরাফুল হক মাসুম, আমিন, টুলু প্রমুখ নিয়মিত উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। ১৯৮৫ সালে কবির জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ভোলায় অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন। জন্মশতবার্ষিকী সাহিত্য সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির প্রথমে আহ্বায়ক ছিলেন মোশারেফ হোসেন শাজাহান পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক মীজানুর রহমান, সদস্য সচিব ছিলেন মুহাম্মদ শওকাত হোসেন। এ সম্মেলনে ঢাকা থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন আইন বিচার ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম, কবি জাহানারা আরজু, মহাকবি ফেরদৌসীর শাহনামা গ্রন্থের বাংলা অনুবাদক বিশিষ্ট সাহিত্যিক বা সৈয়দ মনিরউদ্দীন ইউসুফ, কথাসাহিত্যিক রাহাত খান, কবি মনিকা রহমান, ড আবুল হাসান শামসুদ্দীন, মোস্তফা হারুন, কবি নাসির আহমেদ, কবি মনীশ রায়, আলাউদ্দিন হোসেনসহ অনেক কবি সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই বছর কবির জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি স্মরণ সভা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম, জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, কবি আল মাহমুদ, কথা সাহিত্যিক রাহাত খানসহ অনেক কবি সাহিত্যিক।
৮৬-৮৮ সালে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে এবং ভোলায় ভোলা টাইম হলে কবি মোজাম্মেল হক ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরান গঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় নিয়মিতভাবে কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে কবিপুত্র এম মোজাম্মেল হক ভূমি সচিব থাকাকালীন ঢাকায় কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন গঠন করেন। তিনি ছিলেন এ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শওকাত হোসেন এর সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিবছর ঢাকায় ও ভোলায় কবি মোজাম্মেল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মিলনায়তন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন ও পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হতো। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ডঃ এনামুল হক এর উদ্যোগে পালিত “স্মরণীয়-বরণীয়” কবি মোজাম্মেল হককে অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রতি বছর  জাদুঘরে কবি সাহেব এর উপরে স্বরণসভা অনুষ্ঠিত হতো।
এসময় কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ভোলায় কবি মোজাম্মেল হক পদক প্রদান উপলক্ষে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনে জাতীয় নেতা জনাব তোফায়েল আহমেদ, মন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান, মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জু অংশগ্রহণ করেছেন। মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকার অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ, মন্ত্রী ও মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জু, স্পীকার মির্জা গোলাম হাফিজ প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অংশগ্রহণ করেছেন। কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে সওগাত স¤পাদক নাসির উদ্দিন, জাতীয় অধ্যাপক মনসুরউদ্দীন জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, জাতীয় অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন, জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, কবি আল মাহমুদ, কবি আল মুজাহিদী, রাহাত খান, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, ড. বেগম জাহানারা, ড. আশরাফ সিদ্দিকী, কবি আসাদ চৌধুরী,
ডক্টর এস এম লুৎফর রহমান, প্রফেসর আ ফ ম সিরাজউদ্দৌলা চৌধুরী, মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, ডক্টর আবুল হাসান শামসুদ্দিন, ড সেলিমা সাঈদ, ড. বেগম জাহানারা, মোস্তফা হারুন, কবি নাসির আহমেদসহ দেশ বরেণ্য কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা অংশগ্রহণ করেছেন।
২০০৩ সালে কবিপুত্র এম মোকাম্মেল হক এর উদ্যোগে একটি সাহিত্য সম্মেলন ভোলায় অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে কবি আল মাহমুদ ,উড়–ক্কু খ্যাত ঔপন্যাসিক নাসরিন জাহানসহ দেশের অনেক কবি সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেছিলেন।
সেই আমলে কলকাতা থেকে কবি মোজাম্মেল হকের জাতীয় মঙ্গলকাব্য একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছিল। দীর্ঘদিন যাবৎ এর প্রকাশনা না থাকায় বইটি যখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় মঙ্গল পরপর দুইবার প্রকাশ করেছে। বর্তমানে বইটি আউট অফ মার্কেট। এ বইটি আমাদের জাতীয় স্বার্থে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রয়োজনে পুনর্মুদ্রণ প্রয়োজন। কবি সাহেবের লেখা মানব মঙ্গল, সমাজ মঙ্গল, উত্থান সংগীত মিলিয়ে ‘মোজাম্মেল হকের কাব্য সংকলন’ নামে মুক্তধারার পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। সে বইটিও বর্তমানে আউট অফ মার্কেট। কবি সাহেবের কাব্যসমগ্র শিরোনামে তার লেখা কবিতাগুলো প্রকাশনা এখন সময়ের প্রয়োজন। ভোলার আরেক কৃতি সন্তান সাহিত্যিক অনুবাদক মোস্তফা হারুন কবি ‘মোজাম্মেল হক স্মরণিকা’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। এ স্মরণিকায় দেশের অনেক বিখ্যাত লেখক সাহিত্যিক কবি ও বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি চারণ কবি মোজাম্মেল হকের উপরে লেখা ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি এখন আর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কবি মোজাম্মেল হকের উপর একটি পরিপূর্ণ স্মারকগ্রন্থ অনেক আগেই প্রকাশ হওয়া উচিত ছিল।
ভোলায় নাজিউর রহমান মঞ্জু মন্ত্রী থাকাকালীন ভোলা টাউনহলের নামকরণ কবি মোজাম্মেল হকের নামে করা হয়। এছাড়াও এ সময় একটি সড়কের নামকরণ কবি মোজাম্মেল হকের নামে করা হয়। ৭৬ সালে কবি সাহেবের মৃত্যুর পরপরই ভোলা খেয়াঘাট সড়কে ভোলা পৌরসভার  শেষ সীমানায় ‘কবি মোজাম্মেল হক তোরণ’ নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি কবি পুত্র প্রতিষ্ঠিত হালিমা খাতুন গার্লস
স্কুল এন্ড কলেজটিকে স্কুল ও কলেজ আলাদা করে কলেজের নামকরণ কবি মোজাম্মেল হকের নামে করা হয়েছে। বর্তমানে ভোলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কবি মোজাম্মেল হক টাউন হল টি পরিত্যক্ত ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার অবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় ভোলা শহরে একটি অডিটোরিয়াম একান্ত প্রয়োজন। সেই অডিটেরিয়ামটির নাম ‘কবি মোজাম্মেল হক সম্মেলন কেন্দ্র’ করার জন্য প্রস্তাব করছি।
কবি মোজাম্মেল হকের মতো দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্বগণ আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক। জাতির ভবিষ্যৎ চলার পথে তারা আলোর মশাল হিসেবে বিবেচিত। কাজেই তাদেরকে স্মরণ করা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাদেরকে উপস্থাপন করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।

বাংলাদেশ সময়: ০:৩৮:৫৭   ৭৬৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য ও সংস্কৃতি’র আরও খবর


দিলরূবা জ্যাসমিনের উপন্যাস “তবুও ছুঁয়ে যায়”- এর মোড়ক উন্মোচন
আজকের ভোলা প্রতিনিধি কবি নুরুল আমিনের কাব্যগ্রন্থ ‘ধান শালিকের কাব্যমালা’ প্রকাশ
দৌলতখানের কৃতি সন্তান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কবি হায়াত মাহমুদ অসুস্থ ॥ সকলের দোয়া প্রার্থী
ভোলায় বর্নাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হল গণজাগরনের সাংস্কৃতিক উৎসব
ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের সাহিত্য
কারার ঐ লৌহকপাট
উপমা না বুঝলে সাহিত্য বোঝা দায়
ভোলার দুই দিনব্যাপী সাহিত্য মেলার শুরু
উপন্যাস : রীতি ও প্রকৃতি
সায়ীদ আবুবকরের কাব্যকৃতি



আর্কাইভ