টিকা নিয়ে তেলেসমতি বন্ধ করুন!!

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » টিকা নিয়ে তেলেসমতি বন্ধ করুন!!
বুধবার, ৪ আগস্ট ২০২১



বৈশ্বিক মহামারী করোনা কালে বিশ্বব্যাপী নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে টিকা। বিশ্বের প্রতিটি দেশ সকল নাগরিকদের অধিকার আওতাভুক্ত করার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার ভেদে সফলতা বিভিন্ন রকম হলেও বাংলাদেশের মতো এত তেলেসমতি সম্ভবত কোথাও হয়নি।
প্রথমদিকে গণস্বাস্থ্য সহ যারা দেশে টিকা তৈরি করার অনুমতি চেয়েছিল তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়নি। ভারত থেকে টিকা ক্রয় করেও সেই টিকার অর্ধেকও পাওয়া যায়নি। ফলে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ টিকার ১ ডোজ গ্রহণ করে আরেক ডোজ এখনো গ্রহণ করতে পারেনি। এরপর টিকার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে কিছু দান অনুদান এবং কিছু ক্রয় করা টিকা আসতেছে। বিভিন্ন কোম্পানির টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ চালু রয়েছে। টিকা না দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদেরকে টিকা নেয়ার অভিনয় করতে দেখা গেছে। আবার কোথাও বা মানুষকে ভূয়া টিকা দেয়ার  খবর আসছে। এখনো বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিভিন্ন কো¤পানির টিকা দেয়ার কার্যক্রম চলছে।
সম্প্রতি সরকার ঘোষণা করেছে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সের উপরে সকল নাগরিককে টিকা দেয়া নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার্থীদের কেও টিকা দেয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাতে টিকা নিয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম তারা চালিয়ে যেতে পারে। আগামী ৭ তারিখ থেকে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে টিকার সেন্টার চালু করা হবে। সে ক্ষেত্রে টিকার মান সংরক্ষণ করা, তাপমাত্রা বজায় রাখা অর্থাৎ এর কার্যকরিতা কতদূর বজায় রাখা যাবে সেটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন।
একদিকে সরকার ১৮ বছরের নাগরিকরা টিকা পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে তাদের সবাইকে ভোটার আইডি কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে অনেকেই নানা কারণে ১৮ বছরে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারে না। সিস্টেম গত ত্রুটি, নিজেদের অবহেলাসহ নানা কারণে এটা হয়ে উঠেনা। বহু শিক্ষার্থীর ২০/২১ বছর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো তারা আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি। আমাদের দেশ তো এমন নয় যে ঘরে বসে প্রত্যেক নাগরিক তার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইডি কার্ড পেয়ে যাবে! একটি আইডি কার্ড করানো কতটা কষ্টকর সেটা ভুক্তভোগীরাই টের পায়। এমতাবস্থায় তাদের এসএসসি সনদপত্রে যেহেতু জন্মতারিখ দেয়া থাকে তার আলোকে কিংবা জন্ম সনদের ভিত্তিতে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এই টিকা  দেয়ার বিধান চালু করা একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়টির প্রতি আমরা সরকারের বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকার যেহেতু ১৮ বছরের বয়স সীমা নির্ধারণ করেছে তাই ১৮ বছরের উর্ধ্বে কোন কোন নাগরিক যেন সরকারি তথাকথিত নীতিমালার কারনে টিকা থেকে বঞ্চিত না হয়। সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ও সরকারের। আমরা আশা করব এই বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে সরকার বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য জন্ম সনদ কিংবা এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেটে উল্লেখিত জন্ম তারিখকে ভিত্তি করে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া সকলের টিকাদান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে।
টিকা নিয়ে গত এক-দেড় বছর যাবত আমরা অনেক তেলেসমাতি দেখেছি। সময়মতো টিকা সংস্থান করতে না পেরে সময়ে অসময়ে লকডাউন, শাটডাউন ইত্যাদি করে আমরা নানা রকম তৎপরতা দেখেছি। এর কিছুটা করণা প্রতিরোধে সফল হলেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিমানও একেবারে কম নয়। তাই বর্তমান অবস্থায় প্রধানত হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ভিত্তি করেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ প্রয়োজনীয় তাপমাত্রাসহ এর কার্যকরিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিশেষভাবে ভেবে দেখা উচিত। যেখানে সেখানে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়ে টিকার কার্যকারিতা যেন নষ্ট না হয় সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে ১৮ বছরের উপরের সকল সকল নাগরিক যাতে টিকা পায় সেটা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইডি কার্ডের শর্ত শিথিল করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:২৭:৫৯   ৪১৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ