বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

সহিংসতার মধ্যদিয়ে ভোলার ১২ ইউপিতে ভোটগ্রহন সম্পন্ন, নিহত-১ ॥ ৩ জনের কারাদন্ড, স্বতন্ত্র প্রাথীর ভোটবর্জন

প্রচ্ছদ » অপরাধ » সহিংসতার মধ্যদিয়ে ভোলার ১২ ইউপিতে ভোটগ্রহন সম্পন্ন, নিহত-১ ॥ ৩ জনের কারাদন্ড, স্বতন্ত্র প্রাথীর ভোটবর্জন
সোমবার, ২১ জুন ২০২১



ছোটন সাহা/ আদিল হোসেন তপু ॥
কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষ, অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন এবং কারাদন্ডের মধ্যদিয়ে ভোলার চার উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই বৃস্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হন ভোটাররা।
সকাল ৮টায় ভোটগ্রহন শুরু হয়ে তা চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কিছু কিছু কেন্দ্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চরফ্যাশনে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে দুই মেম্বার প্রার্থী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মনির (২৫) নামে একজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বশির উল্ল্যাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনার প্রধান আসামী রিয়াজ নামের এক জনকে গ্রেপ্তার করে। কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার  প্রার্থী ইয়াসিনের (ফুটবল) ও ইউসুফ (টিউবওয়েল) প্রাথীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়।

---

অপরদিকে মনপুরার হাজিরহাট ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। এদিকে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নান ভোট বর্জন করেছেন। এ সময় তিনি পুনরায় ভোটগ্রহনের দাবী তোলেন।
অন্যদিকে কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশের দায়ে ৩ জনেক তিনদিন করে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। তজুমদ্দিন উপজেলার সম্ভপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে তাদের কারাদন্ড দেয়া হয়। তারা সবাই প্রার্থীদের এজেন্ট ছিলেন।
পশ্চিম চাচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার এমএ ফারুকী বলেন, এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৩২৮। বৃস্টি কারণে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিলো।
সংঘর্ষে নিহত-১: ভোলার চরফ্যাশনে কেন্দ্র দখন নিয়ে মনির (২৫) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। বেলা ১১টায় উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের চর ফকিরা কোয়াইড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মনির ওই এলাকার বশির উল্লার ছেলে।
জানা যায়, ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী ইয়াসিন (ফুটবল) ও ইউসুফ (টিউবওয়েল) সিকদার গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয়রা জানান, কেন্দ্র দখলে চেস্টা এবং প্রভাব বিস্তাররকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি মারা যান।
৩ জনের কারাদন্ড: মোবাইল ফোন নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করার অভিযোগে ভোলার তজুমদ্দিনে তিন এজেন্টকে তিনদিন করে কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার (২১ জুন) ভোট চলাকালীন সময়ে চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে তাদের এ কারাদ- দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী আশরাফুর রহমান এ দন্ড দেন। দন্ডাপ্রাপ্তরা হলেন মান্নান, শাহজাহান ও শাখাওয়াত। তাদের বাড়ি উপজেলার সম্ভপুর বদনাপুর গ্রামে।
জানা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে মোরগ, তালা, বই প্রার্থীর এজেন্ট ওই তিন ব্যক্তি সম্ভুপুর ইউনিয়নের ওই কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি দেখতে পেয়ে তাদের আটক করে কারাদ- দেন। চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক প্রার্থীর ভোট বর্জন: ভোলার তজুমদ্দিনে নির্বাচন বর্জন করেছেন চাচড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নান। ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম, কর্মী সমর্থকদের মারধরসহ নানা অভিযোগে এনে তিনি ভোট বর্জন করেন। দুপুরে তিনি নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন শুরু হওয়ার সাথে তার আনারস প্রতীকের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় প্রতিপক্ষ প্রার্থী নৌকার কর্মীরা। যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট ছিলো তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনের শুরুর আগে বহিরাগত লোকদের দিয়ে তার সমর্থকদের ১৫০টি ঘর ভাংচুর এবং হামলা চালায়। এতে ১০০ কর্মী আহত হয়েছে। ভোটের পরিবেশ না থাকা এবং নানা অনিয়ম হওয়ায় ভোট থেকে সরে গিয়েছি। বিষয়টি প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকেও লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ সময় তিনি ভোট বর্জন করে পুনরায় ভোটের দাবী জানান।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আমির খসরু গাজী বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি লিখিত আমরা অভিযোগ পেয়েছি।
১২ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন ছাড়াও পুরুষ সদস্য পদে ৪০৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাকা গুলি চালায়। দুই পক্ষের গুলিতে মনির নামের একজন নিহত হয়। পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫০:১৮   ৫৪০ বার পঠিত