দেশে নৃশংস, ভয়াবহ, অস্বাভাবিক হত্যাকা- ও অপরাধ বেড়েই চলছে

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » দেশে নৃশংস, ভয়াবহ, অস্বাভাবিক হত্যাকা- ও অপরাধ বেড়েই চলছে
শনিবার, ১৯ জুন ২০২১



ইদানিং দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। খুন, গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কার্যক্রম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে। নির্মমনৃশংস অপ্রত্যাশিত অপরাধ সমূহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে। গত ক’দিনে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর খপ্পরে পড়ে প্রথম স্ত্রীর ১৫ বছরের মাদ্রাসা পড়–য়া পুত্রকে হত্যা করেছে তার পিতা নামের পশু। হত্যায় সহযোগিতা করেছে তার নিজের ভাগ্নি জামাই যিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। কুষ্টিয়ায় পুলিশ সদস্য তার স্ত্রী সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, একই সঙ্গে তার স্ত্রীর প্রেমিককেও খুন করেছে। সিলেটে দুই শিশুসহ মাকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। প্রতিদিনের পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে এ ধরনের অসংখ্য সংবাদ আমরা দেখে শিউরে উঠি। মা সন্তানকে হত্যা করে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করে, পিতা পুত্রকে হত্যা করে, ভাই ভাইকে হত্যা করে, সন্তান মাকে হত্যা করে…. যেসব অপরাধগুলো আগে মানুষ কস্মিনকালেও নিজের জীবন চলে গেলেও কল্পনা করতে পারত না, এখন সেই অপরাধগুলো অহরহ ঘটছে।
সবকিছু দেখে মনে হয় আমরা এক নির্মম নৃশংসতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছি। যেখানে মানুষ স্বার্থের জন্য যে কাউকে হত্যা করতে পারে, যা ইচ্ছা তা করতে পারে। যেখানে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই, ইজ্জতের কোন মূল্য নেই, নেই সামান্যতম নৈতিক মূল্যবোধের শেষ চিহ্নটুকু। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন হলো? আমার মনে হয় এর উত্তর আমাদের কাছে পরিষ্কার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা এবং অপরাধের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার উপায় উপকরণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকোনো বয়সের একজন মানুষ ধ্বংস হওয়ার জন্য একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট যথেষ্ট। আগে অপরাধ করার জন্য মানুষের প্রস্তুতি নিতে হতো, অনেক দূরে যেতে হতো, অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হতো, তারপরও অনেক ভয় ছিল, সামাজিকভাবে, রাষ্ট্রীয়ভাবে, পারিবারিক ইত্যাদি নানান প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু এখন একজন মানুষ না চাইতেই অপরাধের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ হাতের মুঠোয় পেয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন নগ্নতা অশ্লীলতা, স্বার্থ ও ক্ষমতা লাভের অসুস্থ প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষ করে নিজেও সে ধরনের একজন হয়ে যাচ্ছে। অথচ অন্যায় অবিচার অপরাধ ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও প্রতিরোধী মানসিকতা তৈরি হচ্ছে না। যে ধরনের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা একজন মানুষকে এই সবকিছুর প্রতিকূলে তৈরি করতে পারে এবং সকল রকম অপরাধ বিরোধী মানসিকতা সৃষ্টি করতে পারে সেই ধরণের কোন সিলেবাস আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। বরং তার উল্টোটাই রয়েছে। যাতে শিশুকাল থেকেই একজন মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে তৈরি হয়। পৃথিবীতে যুগে যুগে অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে নবী আলাইহিসসালামগণ এবং পরবর্তীতে হক্কানী আলেম ওলামা গণ সকল রকম অপরাধ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে।
প্রত্যেকটি ধর্ম মানুষকে অন্যায় অসত্য অপরাধের বিরুদ্ধে বলেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এর স¤পূর্ণ প্রতিকূলে। একদিকে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের সমাজ সভ্যতা রাষ্ট্র থেকে ধর্মীয় বিধিবিধান শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম যেটুকু আছে তাও বিকৃত অবস্থায়। ফলে মানুষের মন থেকে নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধ ধর্মবোধ দূর হয়ে যাচ্ছে এবং অন্যায় অবিচার অশ্লীলতা বেহায়াপনা অন্যের সম্পদ গ্রহণ যেনতেনভাবে অনেক টাকার মালিক হওয়ার অদম্য ইচ্ছার কারণে ধর্ষণ খুন ও নানাবিধ অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এর থেকে মুক্তির উপায় কি? মুক্তির উপায় একটাই একদিকে অপরাধীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা, সে অনুযায়ী আইন তৈরি করা এবং সে আইনের বাস্তবায়ন করা। অন্যদিকে অপরাধপ্রবণতা যাতে সৃষ্টি না হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেভাবে তৈরি করা। অর্থাৎ মানুষের মনের মধ্যে অপরাধ অন্যায় মানসিকতা সামাজিকভাবে যাতে বিস্তৃত না হয় সেই সমস্ত পথ গুলো বন্ধ করে দেয়া। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে যদি সত্যিকার অর্থে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ বাস্তবায়ন হয়, দেশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অনইসলামিক এবং নীতি নৈতিকতা বিরোধী কাজসমূহকে দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সর্বোপরি অপরাধীদের কঠিন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে এ পরিস্থিতি থেকে জাতি মুক্তি পেতে পারে। আমরা আশা করব সরকার এ ধরনের অপরাধ দূর করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৫:৫১   ৩২৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ