বাড়ছে করোনর প্রকোপ, কাটেনি টিকার অনিশ্চয়তা

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » বাড়ছে করোনর প্রকোপ, কাটেনি টিকার অনিশ্চয়তা
রবিবার, ১৩ জুন ২০২১



রাজশাহীসহ সীমান্ত জেলাগুলোতে ব্যাপক হারে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। প্রতিদিন সে অঞ্চলে শত সহস্রা মানুষ করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে এই ঘাতক ব্যাধির আক্রমণে। শুক্রবার শুধু রাজশাহী হাসপাতালে ১৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার সেখানে ১৬  জন, অন্যান্য দিনও একই হাসপাতালে দশ-বারোজন করে মারা যাচ্ছে। রাজশাহী শহরে লকডাউন করা হয়েছে। সীমান্তের বেশকিছু জেলায় এখন লকডাউন চলছে। এর পরও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ডেল্টা এখন সীমান্ত দিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সবাই শঙ্কিত।এককথায় সারা বাংলাদেশে এখন করোনা আতঙ্ক বিশেষ করে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ডেল্টা এর আশঙ্কায় শঙ্কিত। করণা প্রতিরোধক টিকার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ।এখন পর্যন্ত করোনা টিকা বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু ও সু¯পষ্ট সমাধান আসেনি। ফলে জনগণের চিন্তা দিনদিন আশঙ্কায় পরিণত হচ্ছে। টিকা ক্ষেত্রে সরকার অনেক চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আশ্বাস ছাড়া বাস্তবে কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি।
এ মুহূর্তে প্রয়োজন দেশের প্রয়োজন ৮০% ভাগ মানুষকে করোনা প্রতিরোধক টিকার আওতায় আনা। আর সেই কার্যক্রম শুরুও হয়েছিল। প্রায় ৬৯ লক্ষ লোককে প্রথম টিকা দেয়া হলেও এদের মধ্যে দ্বিতীয় টিকাটি পায়নি তাদের সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ। এ ধরনের একটি অবস্থায় সরকারকে এখন হয় আরো ১৫- ২০ কোটি টিকা সংগ্রহ করতে হবে , নচেৎ টিকার চাহিদা পূরণ করার জন্য দেশে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। এর ব্যত্যয় ঘটলে দেশের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। যার পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ।
বিশ্বে করোনা প্রতিশোধক টিকা আবিষ্কৃত হওয়ার পরই বাংলাদেশ টিকা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দুয়ারে ধরনা দেয় চীনের সাথে প্রাথমিক কথাবাত্রা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের স¤পর্ক এবং ভৌগোলিকভাবে কাছাকাছি হওয়ার কারণে অক্সফোর্ড আ্যস্টরাজেনেকা টিকা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট যারা বিশ্বের অন্যতম টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা তাদের কাছ থেকে ২ কোটি টিকা ক্রয় করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। যথারীতি ২ কোটি টিকার মূল্য পরিশোধ করা হয়। কিন্তু টিকা আদান-প্রদানের কাজটি সরকার থেকে সরকার না করে বাংলাদেশের বেসরকারি কো¤পানি বেকসিমকোকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমে এ টিকা আমদানি করা হয়। ভারতে যখন করোনার প্রকোপ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায় তখন মাত্র ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করার পর ভারত বাকি টিকা বাংলাদেশে সরবরাহের কাজ বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশে অনেক চেষ্টা করেও সেই টিকা ভারত থেকে আনতে ব্যর্থ হয়। এরই ফলশ্রুতিতে দেশের প্রায় ১৪ লক্ষ মানুষ প্রথম টিকা দিয়ে দ্বিতীয় টিকা দিতে পারেনি। অন্যদিকে সরকার চীনের কাছ থেকে টিকা ক্রয়ের ব্যাপারে আরেকটি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশ সেখান থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টিকা উপঢৌকন হিসেবে পেয়েছে। টিকা ক্রয়ের ব্যাপারে একটি চুক্তিপত্রও হয়েছিল। বাংলাদেশকে চায়না যথেষ্ট কম দামে টিকা সরবরাহ করে। তবে চুক্তির শর্ত ছিল মুল্যের বিষয়টি গোপন রাখা। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেটা প্রকাশ করে দেয়ার ফলে চায়না প্রতিবাদ জানায়। বাংলাদেশ যদিও দুঃখ প্রকাশ করেছে। তথাপি স্বল্পমূল্যে টিকা পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে ক্ষেত্রে টিকা আসলেও হয়তোবা চড়া দামে ক্রয় করতে হতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়া এবং ইউরোপের অন্যান্য কো¤পানি থেকে টিকা কেনোর জন্য সরকার নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি লেজেগোবরে অবস্থা। এখন পর্যন্ত কোনো সু¯পষ্ট চুক্তি কিংবা টিকার চালান বাংলাদেশ পৌঁছেনি। এ নিয়ে দেশের জনগণ যথেষ্ট উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
বছরাধিক কাল আগে চীন থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের ৫০ লক্ষে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কোটি কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে কোনরকম বেঁচে রয়েছে। বাংলাদেশেও ১৪ মাস আগে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। প্রথম ধাপে সারাদেশে লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়। গত বছরের শেষের দিকে শীতে করোনা বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও আস্তে আস্তে করোনার প্রকোপ কমে আসে ।কিন্তু চলতি বছর আবার  মার্চ মাস থেকে করোনার প্রকোপ ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। একদিকে ভারত থেকে এনে দেশে করোনার  প্রতিরোধক টিকাদান কর্মসূচি চলতে থাকে, আর পাশাপাশি ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ডেল্টা এসে বাংলাদেশকে আবার আশঙ্কা গ্রস্থ করে ফেলে।
বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে টিকা। কাজেই যেকোনোভাবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে টিকার অন্তর্ভুক্ত করা এখন সবচেয়ে মুখ্য কাজ। যেকোনো ভাবে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। জনগণ সেটার নিশ্চয়তা চায়। অন্যদিকে মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন বাংলাদেশে করোনার টিকা উৎপাদন করা সম্ভব এবং সেজন্য সক্ষমতা স¤পন্ন অনেকগুলো সংস্থা সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছে। কাজেই সে কাজটি যদি আরো আগে থেকে শুরু হতো তাহলে আজকের এই সংকট হয়তোবা সৃষ্টি হতো না। অধিকাংশ করণা বিশেষজ্ঞদের মতে টিকা উৎপাদন এর কোন বিকল্প নেই । এবং এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব। আমরা আশা করব সরকার সে কাজটি অতিসত্বর স¤পাদন করে জনগণকে বর্তমান উদ্বেগ পূর্ণ অবস্থা থেকে উদ্ধার করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৮:৫৮   ৩৩৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ