ভোলা শহরের যানজট নিরসন প্রসঙ্গে

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » ভোলা শহরের যানজট নিরসন প্রসঙ্গে
রবিবার, ২ মে ২০২১



---

দিনদিনই ভোলা শহরের যানজট বেড়ে যাচ্ছে। প্রচ- গরমে রমজানের এই কঠিন সময়ে শহরে যানজটে আটকে কষ্ট পেতে হয় সাধারণ মানুষদের। এটা এখন প্রতিদিনের চিত্র। পক্ষান্তরে এই যানজট নিরসনের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাহ্যতঃ চোখে পড়ছে না। ফলে প্রতিদিনই যানজটের মাত্রা বেড়েই চলছে। ভোলা শহরের নাগরিকরা এ ধরনের যানজটে অভ্যস্ত নয়, তাই তাদের কাছে বিষয়টি একেবারেই অসহ্য।
৬০ বছর আগে নির্মিত ভোলার মাঝের পুল যা থাক থাক পুল নামে পরিচিত ছিল। সেই পুলটি নির্মাণের সময় দূরদর্শিতা নিয়ে তখন চিন্তা করা হয়েছিল, যাতে চকবাজারে বাজার করতে আসা মানুষদের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য এই পুল দিয়ে কোন রিকশা গাড়ি যাতে না চলতে পারে সেজন্য থাক থাক বা সিঁড়ি করে যানবাহন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এবং এর পর্যাপ্ত উচ্চতাও ছিল, যাতে এর নিচে দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারে। অথচ অর্ধ শতাধিক বছর পরে এসে সেই পুলকে আমরা সমতল করে দিয়ে একদিকে যেরকম নৌকা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে অন্যদিকে চকবাজারের মধ্য দিয়ে রিকশা গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়ে যানজটকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আবার দেখি ইদানিং যানজট কমানোর জন্য বাঁশ দিয়ে সেই পুল রিকশা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শুধু পায়ে হাঁটার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এই হচ্ছে আমাদের দূরদর্শিতা নমুনা। ৩০ বছর আগে নাজিউর রহমান এর সময় ওয়ান ওয়ে করা হয়েছিল সদর রোড, তাতে বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের মাধ্যমে যানজট কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। নব্বইয়ের গণ-অভ্যূত্থানের পর সেই সিস্টেম বাদ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে সড়ক বড় করা হয়েছে,একাধিক বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, খালপাড়ের রাস্তাটিকে গাড়ি-ঘোড়া চলার উপযোগী করা হয়েছে। তার পরেও প্রতিদিন ট্রাফিক জ্যাম লেগে থাকে। কারণটা কি?
গত ক’বছর যাবত প্রয়োজনের চেয়ে বহুগুণ বেশি সংখ্যক বোরাক এবং ইঞ্জিন চালিত অটোরিকশা চালু হওয়ার পর এ অবস্থা দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। এছাড়া আগে ট্রাক, ট্রলি কাঁকড়া জাতীয় মালবাহী বিভিন্ন যানবাহন দিনের বেলা পৌরসভার মধ্যে ঢুকতে দেয়া হতো না। বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করতো অথবা রাত দশটার পর চলতো। এখন আর সে অবস্থা নেই । যখন তখন ইট নিয়ে, বালি নিয়ে অথবা মালামাল নিয়ে সমস্ত মালবাহী যানবাহনগুলো শহরে ঢুকে পুরো রাস্তা আটকে দেয়। আগে নতুন বাজারে পার্কিংয়ের একটা বিশাল জায়গা ছিল। এখন সেটা নেই। পার্কিংয়ের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। কি পরিমাণ অটোরিকশা এবং বোরাক টাইপের গাড়ি শহরের মধ্যে আসবে তার কোন সীমা পরিসীমা নির্ধারণ করা নেই। অন্যদিকে শহরের ভেতরকার রাস্তার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব না। ফলে প্যাসেঞ্জারের চেয়ে এখন যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর ঢাকা থেকে বেকার হয়ে আসা হাজার হাজার যুবক ভোলায় এখন অটোরিকশা কিংবা বোরাক টাইপের যানবাহন চালাচ্ছে। এদের নিয়ন্ত্রণের লাইসেন্সের কিংবা চলাচলের কোন নীতিমালা অথবা নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই বর্তমান যানজটের মূল কারণ। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নাগরিকদের সুবিধার জন্যই তো যানবাহন। সেই সুবিধার পরিবর্তে যদি অসুবিধা সৃষ্টি হয় তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া এই অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের ফলশ্রুতিতে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে বিশেষ করে ট্রাক-মোটরসাইকেল, ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে থাকে।
ভোলার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভা প্রয়োজনে সিভিল সোসাইটির প্রয়োজনীয় সদস্যদের নিয়ে বসে ভোলার যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। প্রতিমাসে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়, জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভা হয়। কিন্তু তারপরেও এ ধরনের অবস্থা কিভাবে বিদ্যমান থাকে তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমূহ যদি আন্তরিক হয় তাহলে অবশ্যই এই অপ্রয়োজনীয়, অনাকাংখিত যানজট বন্ধ হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১:২০:৪২   ৪১৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ