ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের মধ্যকার বাকযুদ্ধ ও ক্ষমতা প্রয়োগে অতিউৎসাহী সংস্কৃতি

প্রচ্ছদ » মুক্তমঞ্চ » ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের মধ্যকার বাকযুদ্ধ ও ক্ষমতা প্রয়োগে অতিউৎসাহী সংস্কৃতি
সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১



: মোঃ ইকবাল হোসাইন :

 

ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের মধ্যকার বাকযুদ্ধ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাস্তবে সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে চলমান আন্তঃসার্ভিস দ্বন্দ্ব, হিংসা ও বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ সরকারি আন্তঃসার্ভিসের অধিভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধের অধঃপতনের বহিঃপ্রকাশ। গত রবিবারের ঘটনার দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত। এমন অনেক দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে যা লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। যার ফলাফল সরকারের প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড দুইজন কর্মকর্তা ও একজন দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যকার অসমীচীন বাকযুদ্ধ। যার পুরো আলোচনা জুরে ছিলো ক্ষমতার দাপট। প্রত্যেকেই নিজেকে সর্বোচ্চ শ্রেণির সম্মুখ সারির করোনাযোদ্ধা, নিজ পেশার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলিষ্ঠ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মনোভাব। আর সে শক্তি তারা নিজেদের মধ্যকার বাকযুদ্ধ ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। রবিবারের ঘটনার জন্য মূলত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী মনোবৃত্তিই সর্বান্তকরণে দায়ী। যা বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যাবস্থায় সরকারি বেসরকারি অফিস বিশেষ করে   সরকারি অফিস, দপ্তর, বিভাগ ও অধিদপ্তরে চলমান চালচিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

---

এবার আসি মূল প্রসঙ্গেঃ পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রের সংকটকালীন মুহূর্তে দেশের সকল পেশাজীবি (ডাক্তার, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,  প্রশাসন, শিক্ষক, সংবাদকর্মী  ব্যাংকার, রাজস্বকর্মী, সমাজকর্মীসহ অন্যান্যরা), শ্রমজীবী, কৃষিজীবী সকলেই রাষ্ট্রের সংকট দূরীকরণের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এখানে নিজের পেশাকে নিজেই শ্রেষ্ঠত্বের তকমা দেয়া অসমীচীন। কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ভাষায় - বড় কে?
আপনাকে বড় বলে
বড় সেই নয়,
লোকে যারে বড় বলে
বড় সেই হয়।…..
বড় যদি হতে চাও
ছোট হও তবে।
সরকারি সেবায় রাষ্ট্র মেধাবীদের
অগ্রাধিকার দিতে চায় তার অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্র নৈতিকতা, মানবিক গুণাবলী ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতাবোধ বর্জিত মেধাবীদের চায়। বরং রাষ্ট্র নৈতিক, মানবিক গুণাবলী সম্বলিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতাবোধে উদ্দীপ্ত মেধাবীদের রাষ্ট্রসেবায় নিয়োজিত করতে চায়। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব, হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বড় ও ছোট ভাইদের দেখেছি যারা বিভিন্ন ধরনের পেশায় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তারা অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠ, নৈতিক, মানবিক গুণাবলী সম্বলিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে রাষ্ট্র সেবা প্রদান করছেন।গত রবিবারের ঘটনায় স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান যে ডাক্তার প্রথমে স্বীকার করেছে যে সে আইডি কার্ড নিয়ে আসেনি এবং তার মুভমেন্ট পাস নেই তার পরিবর্তে তিনি স্বীয় নামে প্রত্যায়িত জরুরি সেবায় নিয়োজিত ডাক্তার হিসেবে তার পরিচয় পত্রের প্রমান স্বরূপ  প্রত্যয়নপত্রের কপি দেখান। তাছাড়া ডাক্তারের নিজের নামাঙ্কিত এপ্রোনটাও তো দৃশ্যমান ছিলো। তখন  ডাক্তারের প্রতি কর্তব্যরত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের শ্রদ্ধাশীল হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় ছিল। যেহেতু তিনি ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত একজন উর্ধতন কর্মকর্তা (ডা. সাঈদা শওকত জেনী, সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)। এখানে আইডি কার্ড চাওয়া আমি মনে করি অযাচিত ও অসমীচীন। যেহতু ডাক্তারের পরিচয় প্রাপ্তিতে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত স্পষ্টত প্রতীয়মান ছিলো। আর আইডি কার্ডই কী কারো পরিচয় উদঘাটনের একমাত্র মাধ্যম।আর মুভমেন্ট পাস ছাড়া ডাক্তারের যাতায়াত আইনের লঙ্ঘন ছিলোনা। কারণ পুলিশের আইজিপি নিজেই স্বীকার করেছেন মুভমেন্ট পাসের  আইনগত ভিত্তি নেই।একথা নিঃসন্দেহে স্বীকার করবেন যে এখানে ডাক্তার না হয়ে যদি উনি পুলিশ কিংবা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা হতেন তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ তো দুরের কথা গাড়িই আটকাতেন না। প্রকারান্তরে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ বিষয়টি আরও জটিল করার চেষ্টার একপর্যায়ে গজ-কচ্ছপের যুদ্ধের সুত্রপাত। পরবর্তীতে ডাক্তারের এহেন কুরুচিপূর্ণ ও লজ্জাকর ভাষার ব্যবহার এবং অন্য পেশার সদস্যদের হেয়প্রতিপন্ন করার আচরণ সত্যিই বেমানান। হয়তোবা তাকে উত্যক্ত করার কারণে উত্তেজিত হয়ে এসব ভাষার ব্যবহার করেছেন।তারপরেও ডাক্তারের এহেন অশোভন আচরণ বেমানান ছিলো। তারপর ডাক্তারের ক্ষমতা প্রদর্শনের একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের নমনীয় অবস্থা। অর্থাৎ শক্তের ভক্ত নরমের যম সংস্কৃতির উত্থান ঘটে। এহেন সংস্কৃতির প্রচলন সাধারণ মানুষ দুঃখ বিলাসের উপায়মাত্র। মূলত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈতিকতা, মানবিক গুণাবলী ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতাবোধ সম্পন্ন  মনোভাব সুন্দর, সুষ্ঠ, সুষম মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মূল হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
লেখকঃ মো. ইকাবাল হোসাইন
৩৬তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা
প্রাক্তন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৬:৪০   ৭৮৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

মুক্তমঞ্চ’র আরও খবর


ভোলা জেলার মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রস্তুতি
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি থেকে
আমার দেখা নিউইয়র্ক শহর
মুদ্রাস্ফীতিতে বাংলাদেশ
রোগীর সম্পৃক্ততাই তার নিরাপত্তা
বঙ্গবন্ধুর চেতনা আমাদের প্রেরণা
বেদনায় ভরা দিন
অর্থনীতিতে নার্সারিশিল্প
এলসি, দ্রব্যমূল্য, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও উত্তরণ
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অপর নাম আওয়ামী লীগ



আর্কাইভ