ভোগ্য পণ্যের উচ্চমূল্য এবং সরকারের বাজার তদারকি প্রসঙ্গে

প্রচ্ছদ » সম্পাদকীয় » ভোগ্য পণ্যের উচ্চমূল্য এবং সরকারের বাজার তদারকি প্রসঙ্গে
সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১



নিত্য প্রয়োজনীয় ও ভোগ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া যেন ঊর্ধ্বমুখে ছুটে চলছে। কেউ পারছে না, এমনকি অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন সরকারও পারছেনা এই পাগলা ঘোড়া কে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে। এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ জনগণ।
এবার রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি শুরু হলো। অথচ সরকার ৩ মাস আগ থেকে রমজানে বাজারে যাতে পণ্যের সরবরাহে কোন সমস্যা না হয় এবং মূল্যবৃদ্ধি না হয় সে জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলো। প্রায় অর্ধডজন সংস্থা ভোগ্য পণ্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহের জন্য নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের সকল শক্তি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। টিসিবিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য কম দামে দেয়ার জন্য করণা মহামারীর শুরু থেকে বাজারে একটিভ রয়েছে। তার পরেও আমরা দেখতে পাই মূল্যবৃদ্ধি সমানে চলছে। চাউল, তেল পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। একদিকে করণা মহামারীর প্রভাবে দেশে চলছে কঠিন কর্মহীন পরিস্থিতি। সাধারণ মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ। অথচ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্য কিনতে হচ্ছে তাদেরকে কয়েকগুণ বেশি টাকা দামে। সবকিছু মিলিয়ে দেশে একটি অস্থির দ্রব্যমূল্যের বাজার আমরা দেখতে পাচ্ছি।
সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটিভ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার ফলাফল যেভাবে পাওয়া উচিত ছিল আমরা সেভাবে পাচ্ছি না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ৮০ টাকার সয়াবিন তেল রাতারাতি ১২০ টাকা হয়ে গেল। বাণিজ্য মন্ত্রী মহোদয় যখন বললেন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা থাকাটাই স্বাভাবিক। তার কথার এক দিনের মধ্যে তা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বেড়ে গেল। এইতো হচ্ছে আমাদের বাজার মনিটরিং তথা মূল্য নিয়ন্ত্রণের নমুনা।
বাজারে কোন পণ্যের অভাব নেই। তার পরেও দ্রব্যমূল্য উর্দ্ধ গতির উপরে কেন প্রভাব পড়ছে না এটাই প্রশ্ন? আসলে মালামাল সরবরাহ চলছে ঠিকই। কিন্তু পথে পথে প্রচুর পরিমাণে চাঁদা দিতে হচ্ছে মাল বহনকারী ট্রাক গুলোকে। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি বাজার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে তারা মনোপলি ব্যবসা করে। এরা বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে দেদারচে পয়সা আয় করে যায়। এদের পেছনে আছে অসৎ রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে এদেরকে রক্ষা করে যায়। ভোলার মত বাজারেও কাঁচা বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট রয়েছে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। অর্থাৎ প্রত্যেকটি জায়গায় এ ধরনের সিন্ডিকেট। মূলত সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজির কারণে দ্রব্যমূল্য এভাবে বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু সরকার যেসব সংস্থা দ্বারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মধ্যেই ভূত রয়ে গেছে। অসৎ ব্যবসায়ীদের মদদদাতারা প্রশাসনের কোন কোন শাখায় থেকে তাদেরকে সহযোগিতা দিচ্ছে সেগুলো আগে নিরূপণ করা প্রয়োজন। সাধারণ জনগণ একটাই চায়, দ্রব্যমূল্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে পবিত্র রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য রাস পায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। এখানে তথাকথিত মুসলিম ব্যবসায়ীদের রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। এ ধরনের মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি কার্যকর করে দ্রব্যমূল্য কে আয়ত্তের মধ্যে আনা এখন সময়ের প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৪:২২   ৩৯১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সম্পাদকীয়’র আরও খবর


ডলার বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা
ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে প্রতারণা
রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদ : সমঝোতার বিকল্প নেই
বাজারে কারসাজি
নৌ দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন
চিকিৎসক ধর্মঘট: রোগীদের জিম্মি করে কর্মসূচি অনৈতিক
নৌযানে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নিন
ফিটনেসহীন নৌযান: ভোলা নৌপথে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
চরফ্যাশনের ঢালচর বনের ঢাল কারা?
বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস : সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব দৃশ্যমান হচ্ছে না



আর্কাইভ