আজকের ভোলা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর দফায় দফায় সরেজমিনে প্রশাসনের তদন্তদল

প্রচ্ছদ » অপরাধ » আজকের ভোলা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর দফায় দফায় সরেজমিনে প্রশাসনের তদন্তদল
সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১



বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলায় শেলটেক সিরামিক কোম্পানি ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর তেঁতুলিয়া নদীতে বালু বানিজ্যের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে শতাধিক মানুষের ঘরবাড়ী। মাত্র ২০ পয়সা করে প্রতিফুট বালু দেয়ার এমন একটি অর্ডার মানুষের মধ্যে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এমন একটি প্রতিবেদন দ্বীপজেলা ভোলার বহুল প্রচারিত দৈনিক আজকের ভোলা পত্রিকায় ছাপা হলে পরদিনই দুই দফায় সরেজমিন পরিদর্শনে যায় জেলা প্রশাসকের তদন্ত দল। সোমবার (১২ এপ্রিল) সকালে প্রথম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: মিজানুর রহমান সরেজমিন তদন্তে যান। সেখানে তিনি ড্রেজিং এর কারণে নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার জায়গা স্বচোক্ষে দেখেন এবং এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন এখান থেকে আর কোনো বালু কাটতে দেয়া হবেন না। পরে অজ্ঞাত কারণে আবারো জেলা প্রশাসকের তদন্ত দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে! সেই দলও আবারো নদীভাঙ্গণের একই চিত্র দেখতে পান। তারাও ড্রেজিং এ বালু কাটতে দিবেন না বলে এলকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন বলে জানান মো: টুনু মিয়াসহ একাধিক এলাকাবাসী।

---

উল্লেখ্য, বিআইডব্লিউটিএ মাত্র ২০ পয়সা করে তেঁতুলিয়া নদী থেকে শেলটেককে বালু তুলে দিচ্ছে। এমন অবস্থায় ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের হাক্কাঘাটা এলাকার মানুষ ফুসে উঠে। কারণ তাদের শতশত ঘরবাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে দুই কিলোমিটার এলাকা। এঘটনা ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবীদ তোফায়েল আহমেদ এমপি মহোদয়কে জানান এলাকাবাসী। জানা যায়, যেখানে শেলটেক প্রতিফুট বালু তুলতে তার ১০ টাকা করে দুই কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন সেখানে মাত্র ৪ লক্ষ টাকায় টাকায় বিআইডুব্লউটিএ এর অসাধূ কর্মকর্তাদের যোগসাযোসে দুই কিলোমিটার এলাকা নদীরগর্ভে বিলিন করে দিয়ে বালু তুলে নিচ্ছে। এমন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পেরে অসহায় মানুষের চোখে হতাশার হাতছানি। এমন বালু বানিজ্যের প্রতিবাদে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের বাসিন্দারা ফুসে উঠছে। এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে পুলিশে দেয়ার হুমকিসহ ভয়ভীতি দেয়া হয় বলে জানান তারা।
এমন বালু বানিজ্য নিয়ে ২০১৮ সালে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে দূর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া মানুষের খোঁজ খবর নিয়ে এ দূর্নীতির বিরুদ্ধে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেতে বলা হয়েছিলো। সেই তদন্ত প্রতিবেদন আজও অধরা। একই ভাবে ২০১৮ সালের একই যায়গা থেকে শেলটেক সিরামিক কোম্পানির জায়গা ভরাট করার জন্য আবরো বালু কাটছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএর দাবি তারা এ বালু শেলটেক সিরামিক এর কাছে ২০ পয়সা করে বিক্রি করছেন। অথচ অত্র নদী দিয়ে লঞ্চ চলাচলের জন্য ড্রেজিং এর বালু কাটা হবে সিমিত পরিসরে। কিন্তু একটি জায়গা থেকে ২০ লক্ষ ফুট বা তার বেশি বালু কাটবে কেন? কার স্বার্থে এতো পরিমানে বালু কাটা হচ্ছে। তাও মাত্র ২০ পয়সা! ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের বক্তব্য একটি কোম্পানিকে সুবিধা দেয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থেকে বালু কাটা হচ্ছে। এর ফলে দুই কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও শতশত একর ফসলি জমি।
ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে শেলটেক কোম্পানি একটি সিরামিক ফ্যাক্টরি করে। ফ্যাক্টরি করার সময় বরিশালের নদী থেকে বালু কিনে এনে ফেলে তার জায়গা ভরাট করে কর্তৃপক্ষ। এর কয়েক মাস পর আরো জায়গা ভরাট করার জন্য বাহির থেকে বালু এনে ভরাট না করে, পাশেরই নদী থেকে বিআইডব্লিউটিএর একটি চক্রের সাথে আতাত করে বালু কেটে শেলটেকের জায়গা ভরাট করছে। তাতে দুপক্ষই লাভমান হচ্ছে। যেমন, কোম্পানি কমদামে বালু পাচ্ছে, আর বিআইডব্লিইটি এর কাছে নামে মাত্র টাকা জমা দিয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট ভারি হচ্ছে। আর ভেঙ্গে যাচ্ছে শতমত একর জমি। গৃহহারা হচ্ছে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। হাক্কাঘাট এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, বাবা মায়ের সৃতি নিয়ে যে ভিটে মাটিতে বাস করতাম তা আজ এ ড্রেজিং এর কারণে বিলীন হতে চলেছে। জহিরুল ইসলাম বলেন, শেলটেক আমাদের এলাকায় ক্যান্সারের ন্যায় মানুষকে শোষণ করে মারছে। কোটি কোটি টাকা খরচ বাচাতে শেরটেক বিআইডব্লিউটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাযোসে এমন অনিয়ম করে বেড়াচ্ছে। এমন অভিযোগ করে অনেকে বলেন, আজ বাপদাদার ভিটে মাটির মসজিদ মক্তব সব কিছু তাদের এ বালু বানিজ্যের কারণে স্মৃতি থেকে মুছে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে শেলটেক সিরামিক কোম্পানির ভোলার কোনো প্রতিনিধির সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত দলের প্রধান মূখপাত্র হিসেবে ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: মিজানুর রহমান এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে এডিসি এভিনিউ, পানিউন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ আমরা সরজমিনে যাই। সেখানে গিয়ে শেলটেকের বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতেই চালে তারা বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন নিয়ে বালু তুলছে। আমাদেরকে অনুমোদনের কাগজপত্র দেখিয়েছে। তবে সেই বালু উত্তোলনে নদী ভাঙনের ঝুঁকি আছে কি না সেটির তদন্ত চলছে। যদি নদী ভাঙনের ঝুঁকি থাকে তাহলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিবো।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৬:৫৩   ৪৭২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অপরাধ’র আরও খবর


ভাইয়ের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী উজ্জলের মানবেতর জীবন
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোলায় সমাবেশ
ভোলায় পোস্ট অফিসে আইসক্রিমের ব্যবসা
লালমোহনে আবাসনের ঘর জবর দখলের অভিযোগ
ভোলায় যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে ৮৫ মণ মাছ জব্দ
ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না ভোলার বিএমইটি অফিসে॥ প্রতিদিন ঘুষের আয় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা!!
ভোলায় ফিল্মি স্টাইলা অপহরণ ॥ কতিপর উদ্ধার
ফুঁক দিয়েই সব সমস্যার সমাধান করেন ফরিদ!
প্রেমিকের সঙ্গে ‘বিয়ে’ রফাদফায় এসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ধরা তরুণী, অতঃপর…
ভোলায় যৌতুকের মামলা দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিলো স্বামী ॥ শিশু সন্তান নিয়ে দুশ্চিতায় হাফছা



আর্কাইভ